পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
১৭৫

রাজার সভায় গিয়ে আপনার বাক্য বলেছি, কিন্তু তিনি বা কোনও সভাসদ উত্তর দিলেন না। তার পর আমি বাহুক নামক এক রাজভৃত্যের কাছে গেলাম। সে রাজার সারথি, কুরূপ, খর্ববাহু দ্রুত রথচালনায় নিপুণ, সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুত করতেও জানে। সে বহুবার নিঃশ্বাস ফেলে ও রোদন ক’রে আমার কুশল জিজ্ঞাসা করলে, তার পর বললে, সতী কুলস্ত্রী বিপদে পড়লেও নিজের ক্ষমতায় নিজেকে রক্ষা করেন। পক্ষী যার বসন হরণ করেছিল, সেই মোহগ্রস্ত বিপদাপন্ন ক্ষুধার্ত পতি পরিত্যাগ ক’রে চ’লে গেলেও সতী নারী ক্রুদ্ধ হন না। এই বার্তা শনে দময়ন্তী তাঁর জননীকে বললেন, আপনি পিতাকে কিছু জানাবেন না। এখন সুদেব শীঘ্র ঋতুপর্ণের রাজধানী অযোধ্যায় যান এবং নলকে আনবার চেষ্টা করুন।

 দময়ন্তী পর্ণাদকে পারিতোষিক দিয়ে বললেন, বিপ্র, নল এখানে এলে আমি আবার আপনাকে ধনদান করব। পর্ণাদ কৃতার্থ হয়ে চ’লে গেলে দময়ন্তী সুদেবকে বললেন, আপনি সত্বর অযোধ্যায় গিয়ে রাজা ঋতুপর্ণকে বলুন — ভীম রাজার কন্যা দময়ন্তীর পুনর্বার স্বয়ংবর হবে, কল্য সূর্যোদয়কালে তিনি দ্বিতীয় পতি বরণ করবেন, কারণ নল জীবিত আছেন কিনা জানা যাচ্ছে না। বহু রাজা ও রাজপুত্র স্বয়ংবর সভায় যাচ্ছেন, আপনিও যান।


 সহদেবের বার্তা শুনে ঋতুপর্ণ নলকে বললেন, বাহুক, আমি একদিনের মধ্যে বিদর্ভরাজ্যে দময়ন্তীর স্বয়ংবরে যেতে ইচ্ছা করি। নল দুঃখার্ত হয়ে ভাবলেন, আমার সঙ্গে মিলিত হবার জন্যই কি তিনি এই উপায় স্থির করেছেন? আমি হীনমতি অপরাধী, তাঁকে প্রতারিত করেছি, হয়তো সেজন্যই তিনি এই নৃশংস কর্মে প্রবৃত্ত হয়েছেন। না, তিনি কখনও এমন করবেন না, বিশেষত তাঁর যখন সন্তান রয়েছে। ঋতুপর্ণকে নল বললেন যে তিনি একদিনেই বিদর্ভনগরে পৌঁছবেন তার পর তিনি অশ্বশালায় গিয়ে কয়েকটি সিন্ধুদেশজাত কৃশকায় অশ্ব বেছে নিলেন। তা দেখে রাজা কিঞ্চিৎ রুষ্ট হয়ে বললেন, বাহুক, এইসকল ক্ষীণজীবী অশ্ব নিচ্ছ কেন, আমাকে কি প্রতারিত করতে চাও? নল উত্তর দিলেন, মহারাজ, এই অশ্বগুলির ললাট মস্তক পার্শ্ব প্রভৃতি স্থানে দশটি রোমাবর্ত— আছে, দ্রুতগমনে এরাই শ্রেষ্ঠ। তবে আপনি যদি অন্য অশ্ব উপযুক্ত মনে করেন, তাই নেব। ঋতুপর্ণ বললেন, বাহুক, তুমি অশ্বতত্ত্বজ্ঞ, যে অশ্ব ভাল মনে কর তাই নাও। তখন নল নিজের নির্বাচিত চারটি অশ্ব রথে যুক্ত করলেন।