পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
১৭৭

১৮। নল-দময়ন্তীর পুনর্মিলন

 ঋতুপর্ণ সায়ংকালে বিদর্ভরাজপুর কুণ্ডিন নগরে প্রবেশ করলেন। নলচালিত রথের মেঘগর্জনের ন্যায় ধ্বনি শুনে দময়ন্তী অত্যন্ত বিস্মিত হলেন। তিনি ভাবলেন, নিশ্চয় মহীপতি নল এখানে আসছেন। আজ যদি তাঁর চন্দ্রবদন না দেখতে পাই, যদি তাঁর বাহুদ্বয়ের মধ্যে প্রবেশ করতে না পারি, তবে আমি নিশ্চয় মরব। দময়ন্তী জ্ঞানশূন্য হয়ে প্রাসাদের উপরে উঠে ঋতুপর্ণ বাষ্ণেয় ও বাহুককে দেখতে পেলেন।

 ঋতুপর্ণ স্বয়ংবরের কোনও আয়োজন দেখতে পেলেন না। বিদর্ভমাজ ভীম কিছুই জানতেন না, তিনি ঋতুপর্ণকে সসম্মানে সংবর্ধনা ক’রে তাঁর আগমনের কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। ঋতুপর্ণ দেখলেন, কোনও রাজা বা রাজপুত্র স্বয়ংবরের জন্য আসেন নি; অগত্যা তিনি বিদর্ভরাজকে বললেন, আপনাকে অভিবাদন করতে এসেছি। রাজা ভীমও বিস্মিত হয়ে ভাবলেন, শত যোজনের অধিক পথ অতিক্রম ক’রে কেবল অভিবাদনের জন্য এঁর আসবার কারণ কি?

 রাজভৃত্যগণ ঋতুপর্ণকে তাঁর জন্য নির্দিষ্ট গৃহে নিয়ে গেল, বার্ষ্ণেয়ও তাঁর সঙ্গে গেল। বাহুকরপী নল রথশালায় রথ নিয়ে গিয়ে অশ্বদের যথাবিধি পরিচর্যা ক’রে রথেতেই বসলেন। দময়ন্তী নলকে না দেখে শোকার্তা হলেন, তিনি কেশিনী নামে এক দূতীকে বললেন, তুমি জেনে এস ওই হ্রস্ববাহু বিরূপ রথচালকটি কে?

 দময়ন্তীর উপদেশ অনুসারে কেশিনী নলের কাছে গিয়ে কুশলপ্রশ্ন ক’রে বললে, দময়ন্তী জানতে চান আপনারা অযোধ্যা থেকে কেন এখানে এসেছেন। আপনি কে, আপনাদের সঙ্গে যে তৃতীয় লোকটি এসেছে সেই বা কে? নল উত্তর দিলেন, দময়ন্তীর দ্বিতীয়বার স্বয়ংবর হবে শুনে রাজা ঋতুপর্ণ এখানে এসেছেন। আমি অশ্ববিদ্যায় বিশারদ সেজন্য রাজা আমাকে সারথি করেছেন, আমি তাঁর আহারও প্রস্তুত করি। তৃতীয় লোকটির নাম বার্ষ্ণেয়, পূর্বে সে নলের সারথি ছিল, নল রাজ্যত্যাগ করার পর থেকে সে রাজা ঋতুপর্ণের আশ্রয়ে আছে। কেশিনী বললে, বাহুক, নল কোথায় আছেন বার্ষ্ণেয় কি তা জানে? নল বললেন, সে বা অন্য কেউ নলের সংবাদ জানে না, তাঁর রূপ নষ্ট হয়েছে, তিনি আত্মগোপন ক’রে বিচরণ করছেন। কেশিনী বললে, যে ব্রাহ্মণ অযোধ্যায় গিয়েছিলেন তাঁর কথার উত্তরে আপনি যা বলেছিলেন দময়ন্তী পুনর্বার তা আপনার নিকট শুনতে চান। নল অশ্রুপপূর্ণনয়নে বাষ্পগদ্‌গদস্বরে পূর্ববৎ বললেন, সতী কুলস্ত্রী বিপদে পড়লেও