পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৪
মহাভারত

শুনতে পেলেন না, তিনি বল্মীকস্তূপের ভিতরে চ্যবনের দুই চক্ষু দেখতে পেয়ে বললেন, একি! তার পর কৌতূহল ও মোহের বশে কাঁটা দিয়ে বিদ্ধ করলেন। চ্যবন অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে শর্যাতির সৈন্যদের মলমূত্র রুদ্ধ করলেন। সৈন্যদের কষ্ট দেখে রাজা সকলকে জিজ্ঞাসা করলেন, বৃদ্ধ ক্রোধী চ্যবন ঋষি এখানে তপস্যা করেন, কেউ তাঁর অপকার করে নি তো? সুকন্যা বললেন, বল্মীকস্তূপের ভিতরে খদ্যোতের ন্যায় দীপ্যমান কি রয়েছে দেখে আমি কণ্টক দিয়ে বিদ্ধ করেছি। শর্যাতি তখনই চ্যবনের কাছে গিয়ে কৃতাঞ্জলি হয়ে বললেন, আমার বালিকা কন্যা অজ্ঞানবশে আপনাকে পীড়া দিয়েছে, ক্ষমা করুন। চ্যবন বললেন, রাজা, তোমার কন্যা দর্প ও অবজ্ঞার বশে আমাকে বিদ্ধ করেছে, তাকে যদি দান কর তবে ক্ষমা করব। শর্যাতি বিচার না করেই তাঁর কন্যাকে সমর্পণ করলেন।

 সুকন্যা সযত্নে চ্যবনের সেবা করতে লাগলেন। একদিন অশ্বিনীকুমারদ্বয় সুকন্যাকে স্নানের পর নগ্নাবস্থায় দেখতে পেয়ে তাঁকে বললেন, ভাবিনী, তোমার ন্যায় সুন্দরী দেবতাদের মধ্যেও নেই। তোমার পিতা তোমাকে বৃদ্ধের হস্তে দিয়েছেন কেন? তুমি শ্রেষ্ঠ বেশভূষা ধারণের যোগ্য, জরাজর্জরিত অক্ষম চ্যবনকে ত্যাগ ক’রে আমাদের একজনকে বরণ কর। সুকন্যা বললেন, আমি আমার স্বামীর প্রতি অনুরক্ত। অশ্বিনীকুমারদ্বয় বললেন, আমরা দেবচিকিৎসক, তোমার পতিকে যুবা ও রূপবান ক’রে দেব, তার পর তিনি এবং আমরা এই তিন জনের মধ্যে একজনকে তুমি পতিত্বে বরণ করো। সুকন্যা চ্যবনকে জানালে তিনি এই প্রস্তাবে সম্মত হলেন। তখন অশ্বিনীকুমারদ্বয় চ্যবনকে নিয়ে জলে প্রবেশ করলেন এবং মুহূর্তকাল পরে তিন জনেই দিব্য রূপ ও সমান বেশ ধারণ ক’রে জল থেকে উঠলেন। সকলে তুল্যরূপধারী হ’লেও সুকন্যা চ্যবনকে চিনতে পেরে তাঁকেই বরণ করলেন। চ্যবন হৃষ্ট হয়ে অশ্বিনীদ্বয়কে বললেন, আপনারা আমাকে রূপবান যুবা করেছেন, আমি এই ভার্যাকেও পেয়েছি। আমি দেবরাজের সমক্ষেই আপনাদের সোমপায়ী করব।

 চ্যবনের অনুরোধে রাজা শর্যাতি এক যজ্ঞ করলেন। চ্যবন যখন অশ্বিদ্বয়কে দেবার জন্য সোমরসের পাত্র নিলেন তখন ইন্দ্র তাঁকে বারণ করে বললেন, এঁরা দেবতাদের চিকিৎসক ও কর্মচারী মাত্র, মর্ত্যলোকেও বিচরণ করেন, এঁরা সোমপানের অধিকারী নন। চ্যবন নিরস্ত হলেন না, ঈষৎ হাস্য করে অশ্বিদ্বয়ের জন্য সোমপাত্র তুলে নিলেন। ইন্দ্র তখন বজ্রপ্রহারে উদ্যত হলেন। চ্যবন ইন্দ্রের বাহু স্তম্ভিত ক’রে মন্ত্রপাঠ ক’রে অগ্নিতে আহূতি দিলেন, অগ্নি থেকে মদ