পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০২
মহাভারত

অতি কষ্টে গুরুদের তুষ্ট ক’রে দীর্ঘকালে বেদজ্ঞান লাভ করেছিলেন, সেজন্য তাঁর জ্ঞানই শ্রেষ্ঠ।

৩১। নরকাসুর ― বরাহরূপী বিষ্ণু ― বদরিকাশ্রম

 উশীরবীজ ও মৈনাক পর্বত, শ্বেতগিরি এবং কালশৈল অতিক্রম করে যুধিষ্ঠিরাদি সপ্তধারা গঙ্গার নিকট উপস্থিত হলেন। লোমশ বললেন, এখন আমরা মণিভদ্র ও যক্ষরাজ কুবেরের স্থান কৈলাসে যাব। সেই দুর্গম প্রদেশ গন্ধর্ব কিন্নর যক্ষ ও রাক্ষসগণ কর্তৃক রক্ষিত, তোমরা সতর্ক হয়ে চল। যুধিষ্ঠির বললেন, ভীম, তুমি দ্রৌপদী ও অন্য সকলের সঙ্গে এই গঙ্গাদ্বারে অপেক্ষা কর, কেবল আমি নকুল ও মহাতপা লোমশ এই তিনজন লঘু আহার ক’রে ও সংযত হয়ে এই দুর্গম পথে যাত্রা করব। ভীম বললেন, অর্জুনকে দেখবার জন্য দ্রৌপদী এবং আমরা সকলেই উৎসুক হয়ে আছি। এই রাক্ষসসংকুল দুর্গম স্থানে আপনাকে আমি ছেড়ে দিতে পারি না। পাঞ্চালী বা নকুল-সহদেব যেখানে চলতে পারবেন না সেখানে আমি তাঁদের বহন ক’রে নিয়ে যাব। দ্রৌপদী সহাস্যে বললেন, আমি চলতে পারব, অমার জন্য ভেবো না।

 যুধিষ্ঠিরাদি সকলে পুলিন্দরাজ সুবাহুর বিশাল রাজ্যে উপস্থিত হলেন এবং সসম্মানে গৃহীত হয়ে সেখানে সুখে রাত্রিযাপন করলেন। পরদিন সূর্যোদয় হ’লে পাচক ও ভৃত্যদের পুলিন্দরাজের নিকটে রেখে তাঁরা পদব্রজে হিমালয় পর্বতের দিকে যাত্রা করলেন। যেতে যেতে এক স্থানে এসে লোমশ বললেন, দূরে ওই যে কৈলাসশিখরতুল্য সুবিশাল সদৃশ্য স্তূপ দেখছ তা নরকাসুরের অস্থি। নরকাসুর তপস্যার প্রভাবে ও বাহুবলে দুর্ধর্ষ হয়ে দেবগণের উপর উৎপীড়ন করত। ইন্দ্রের প্রার্থনায় বিষ্ণু হস্তদ্বারা স্পর্শ করে সেই অসুরের প্রাণহরণ করেন।

 তার পর লোমশ বরাহরূপী বিষ্ণুর এই আখ্যান বললেন।— সত্যযুগে এক ভয়ংকর কালে আদিদেব বিষ্ণু যমের কার্য করতেন। তখন কেউ মরত না, কেবল জন্মগ্রহণ করত। পশু পক্ষী মানুষ প্রভৃতির সংখ্যা এত হ’ল যে তাদের গুরুভারে বসুমতী শত যোজন নিম্নে চ’লে গেলেন। তিনি সর্বাঙ্গে ব্যথিত হয়ে বিষ্ণুর শরণাপন্ন হলেন। তখন বিষ্ণু রক্তনয়ন একদন্ত ভীষণাকার বরাহের রূপে পৃথিবীকে দন্তে ধারণ করে শত যোজন ঊর্ধ্বে তুললেন। চরাচর সংক্ষোভিত হ’ল,