পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
২০৩

দেবতা ঋষি প্রভৃতি সকলেই কম্পিত হয়ে ব্রহ্মার নিকটে গেলেন, ব্রহ্মা আশ্বাস দিয়ে তাঁদের ভয় দূর করলেন।

 পাণ্ডবগণ গন্ধমাদন পর্বতে উপস্থিত হ’লে প্রবল ঝড়বৃষ্টি হ’তে লাগল, সকলে ভীত হয়ে বৃক্ষ বল্মীকস্তূপ প্রভৃতির নিকট আশ্রয় নিলেন। দুর্যোগ থেমে গেলে তাঁরা আবার চলতে লাগলেন। এক ক্রোশ গিয়ে দ্রৌপদী শ্রান্ত ও অবশ হয়ে ভূমিতে প’ড়ে গেলেন। যুধিষ্ঠির তাঁকে কোলে নিয়ে বিলাপ করতে লাগলেন— আমি পাপী, আমার কর্মের ফলেই ইনি শোকে ও পথশ্রমে ক্লান্ত হয়ে ভূপতিত হয়েছেন। ধৌম্য প্রভৃতি ঋষিগণ শান্তির জন্য মন্ত্র জপ করলেন, পাণ্ডবগণ দ্রৌপদীকে মগচর্মের উপর শুইয়ে নানাপ্রকারে তাঁর সেবা করতে লাগলেন। যাধিষ্ঠির ভীমকে বললেন, তুষারাবৃত দুর্গম গিরিপথে দ্রৌপদী কি ক’রে যাবেন? ভীম স্মরণ করা মাত্র মহাবাহু ঘটোৎকচ সেখানে এসে করজোড়ে বললেন, আজ্ঞা করুন কি করতে হবে। ভীম বললেন, বৎস, তামার মাতা পরিশ্রান্ত হয়েছেন, এঁকে বহন করে নিয়ে চল। তুমি এঁকে স্কন্ধে নিয়ে আমাদের নিকটবর্তী হয়ে আকাশমার্গে চল, যেন এঁর কষ্ট না হয়।

 ঘটোৎকচ দ্রৌপদীকে বহন করে নিয়ে চললেন, তাঁর অনুচর রাক্ষসরা পাণ্ডব ও ব্রাহ্মণদের নিয়ে চলল, কেবল মহর্ষি লোমশ নিজের প্রভাবে সিদ্ধমার্গে দ্বিতীয় ভাস্করের ন্যায় অগ্রসর হলেন। বদরিকাশ্রমে উপস্থিত হয়ে সকলে রাক্ষসদের স্কন্ধ থেকে নেমে নরনারায়ণের রমণীয় আশ্রম দর্শন করলেন। দেখানকার মহর্ষিগণ যুধিষ্ঠিরাদিকে সাদরে গ্রহণ ক’রে যথাবিধি অতিথিসৎকার করলেন। সেই আনন্দজনক অতি দুর্গম স্থানে বিশাল বদরী তরুর নিকটে ভাগীরথী নদী প্রবাহিত হচ্ছে। যুধিষ্ঠিরাদি সেখানে পিতৃগণের তর্পণ করলেন।

৩২। সহস্রদল পদ্ম ― ভীম-হনুমান-সংবাদ

 অর্জুনের প্রতীক্ষায় পাণ্ডবগণ ছ রাত্রি শুদ্ধভাবে বদরিকাশ্রমে বাস করলেন। একদিন উত্তরপূর্ব দিক থেকে বায়ুদ্দ্বারা বাহিত একটি সহস্রদল পদ্ম দেখে দ্রৌপদী ভীমকে বললেন, দেখ এই দিব্য পদ্মটি কি সুন্দর ও সুগন্ধ! আমি ধর্মরাজকে এটি দেব। ভীম, আমি যদি তোমার প্রিয়া হই তবে এইপ্রকার বহু পদ্ম সংগ্রহ ক’রে নিয়ে এস, আমি কাম্যক বনে নিয়ে যাব। এই বলে দ্রৌপদী