পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১০
মহাভারত

পরিবেষ্টিত প্রিয়দর্শন কুবেরকে দেখতে লাগলেন। কুবেরও খড়্‌গধনুর্ধারী মহাবল পাণ্ডবগণকে দেখে এবং তাঁরা দেবতাদের প্রিয়কার্য করবেন জেনে প্রীত হলেন। যুধিষ্ঠির নকুল ও সহদেব কুবেরকে প্রণাম করলেন এবং নিজেদের অপরাধী মনে করে কৃতাঞ্জলি হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। ভীম খড়্‌গ ও ধনুর্বাণ হাতে নিয়ে কুবেরকে দেখতে লাগলেন।

 কুবের যুধিষ্ঠিরকে বললেন, তুমি প্রাণিগণের হিতে রত তা সকলেই জানে; তোমার ভ্রাতাদের সঙ্গে তুমি নির্ভয়ে এই পর্বতের উপরে বাস কর। ভীমের হঠকারিতার জন্য ক্রুদ্ধ বা লজ্জিত হয়ো না, এই যক্ষ-রাক্ষসদের বিনাশ হবে তা দেবতারা পূর্বেই জানতেন। তার পর কুবের ভীমকে বললেন, বৎস, তুমি দ্রৌপদীর জন্য আমাকে ও দেবগণকে অগ্রাহ্য করে এই যে সাহসের কাজ করেছ তাতে আমি প্রীত হয়েছি, তুমি আমাকে শাপমুক্ত করেছ। কুশবতী নগরীতে যখন দেবগণের মন্ত্রণাসভা হয় তখন আকাশপথে সেখানে যাবার সময় আমি মহর্ষি অগস্ত্যকে দেখেছিলাম, তিনি যমনাতীরে উগ্র তপস্যা করছিলেন। আমার সখা রাক্ষসপতি মণিমান মূর্খতা মোহ ও দর্পের বশে অগস্ত্যের মস্তকে নিষ্ঠীবন ত্যাগ করেন। ক্রোধে চতুর্দিক যেন দগ্ধ ক’রে অগস্ত্য আমাকে বললেন, তোমার এই দুরাত্মা সখা সসৈন্যে মানুষের হাতে মরবে; তুমিও সৈন্যবিনাশের দুঃখ ভোগ করবে, সেই সৈন্যহন্তা মনুষ্যকে দেখে পাপমুক্ত হবে।

 তার পর কুবের যুধিষ্ঠিরকে বললেন, এই ভীমসেন ধর্মজ্ঞানহীন, গর্বিত, বালবুদ্ধি, অসহিষ্ণু ও ভয়শূন্য; একে তুমি শাসনে রেখো। রাজর্ষি আর্ষ্টিষেণের আশ্রমে ফিরে গিয়ে তুমি সেখানে কৃষ্ণপক্ষ যাপন ক’রো, আমার নিযুক্ত গন্ধর্ব যক্ষ কিন্নর ও পর্বতবাসিগণ তোমাদের রক্ষা করবে এবং খাদ্যপানীয় এনে দেবে। কুবেরকে প্রণাম ক’রে ভীম তাঁর শক্তি গদা খড়্‌গ ধনু প্রভৃতি অস্ত্র সমর্পণ করলেন। শরণাগত ভীমকে কুবের বললেন, বৎস, তুমি শত্রুগণের গৌরব নাশ কর, সুহৃদ্‌গণের আনন্দ বর্ধন কর। এই গন্ধমাদন পর্বতে সকলে নির্ভয়ে বাস কর। অর্জুন শীঘ্রই তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবেন। এই ব’লে কুবের অন্তর্হিত হলেন।