পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১২
মহাভারত

পর্বতের ন্যায় বিশালকায় নিবাতকবচগণের মৃতদেহে যুদ্ধস্থান ব্যাপ্ত হ’ল, দানবরমণীগণ উচ্চস্বরে কাঁদতে কাঁদতে তাদের গৃহমধ্যে আশ্রয় নিলে। আমি মাতলিকে জিজ্ঞাসা করলাম, দানবদের এই নগর ইন্দ্রালয়ের চেয়েও উৎকৃষ্ট, দেবতারা এখানে বাস করেন না কেন? মাতলি বললেন, এই নগর পূর্বে দেবরাজেরই ছিল, নিবাতকবচগণ ব্রহ্মার বরপ্রভাবে এই স্থান অধিকার ক’রে দেবতাদের তাড়িয়ে দেয়। ইন্দ্রের অনুযোগে ব্রহ্মা বলেছিলেন, বাসব, এই নিয়তি আছে যে তুমি অন্য দেহে এদের সংহার করবে। এই কারণেই ইন্দ্র তোমাকে অস্ত্রশিক্ষা দিয়েছেন।

 নিবাতকবচগণকে বিনষ্ট ক’রে যখন আমি দেবলোকে ফিরছিলাম তখন আর একটি দীপ্তিময় আশ্চর্য নগর আমার দৃষ্টিগোচর হ’ল। মাতলি বললেন, পুলোমা নামে এক দৈত্যনারী এবং কালকা নামে এক মহাসুরী বহু সহস্র বৎসর তপস্যা করে ব্রহ্মার নিকট এই বর পায় যে, তাদের পৌলোম ও কালকেয় নামক পুত্রগণ দেব রাক্ষস ও নাগের অবধ্য হবে এবং তারা এই প্রভাময় রমণীয় আকাশচারী নগরে বাস করবে। এই সেই ব্রহ্মার নির্মিত হিরণ্যপুর নামক দিব্য নগর। পার্থ, তুমি এই ইন্দ্রশত্রু অসুরগণকে বিনষ্ট কর।

 মাতলি আমাকে হিরণ্যপুরে নিয়ে গেলেন। দানবগণ আক্রমণ করলে আমি তাদের মোহগ্রস্ত করে শরাঘাতে বধ করতে লাগলাম। তাদের নগর কখনও ভূতলে নামল, কখনও আকাশে উঠল, কখনও জলমধ্যে নিমগ্ন হ’ল। তার পর দানবগণ ষাট হাজার রথে চড়ে আমার দিব্যাস্ত্রসমূহ প্রতিহত করে যুদ্ধ করতে লাগল। আমি ভীত হয়ে দেবদেব রুদ্রকে প্রণাম করে রৌদ্র নামে খ্যাত সর্বশত্রুনাশক দিব্য পাশুপত অস্ত্র প্রয়োগে উদ্যত হ’লাম। তখন এক আশ্চর্য পুরুষ আবির্ভূত হ’ল, তার তিন মস্তক, নয় চক্ষু, ছয় হস্ত। তার কেশ সূর্য ও অগ্নির ন্যায় প্রদীপ্ত, লেলিহান মহানাগগণ তা বেষ্টন ক’রে আছে। মহাদেবকে নমস্কার ক’রে আমি সেই ঘোর রৌদ্র অস্ত্র গাণ্ডীবে যোজনা ক’রে নিক্ষেপ করলাম। তৎক্ষণাৎ সহস্র সহস্র মৃগ সিংহ ব্যাঘ্র ভল্লুক মহিষ সর্প হস্তী প্রভৃতি এবং দেব ঋষি গন্ধর্ব পিশাচ যক্ষ ও নানারূপ অস্ত্রধারী রাক্ষস ও অন্যান্য প্রাণীতে সর্বস্থান ব্যাপ্ত হ’ল। ত্রিমস্তক, চতুর্দন্ত, চতুর্ভুজ ও নানারূপধারী প্রাণিগণ নিরন্তর দানবগণকে বধ করতে লাগল, আমিও শরবর্ষণ করে মুহূর্তমধ্যে সমস্ত দানব সংহার করলাম।

 আমি দেবলোকে ফিরে গেলে মাতলির মুখে সমস্ত শুনে দেবরাজ আমার বহু প্রশংসা ক’রে বললেন, পুত্র, তুমি যুদ্ধে অবতীর্ণ হ’লে ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ কর্ণ