পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
২১৩

শকুনি ও তাঁদের সহায়ক রাজারা সকলে মিলে তোমার ষোল ভাগের এক ভাগেরও সমান হবেন না। তার পর তিনি আমাকে এই দেহরক্ষক অভেদ্য দিব্যকবচ, হিরন্ময়ী মালা, দেবদত্ত নামক মহারব শঙ্খ, দিব্য কিরীট এবং এই সকল দিব্য বস্তু ও আভরণ দান করলেন। আমি পাঁচ বৎসর সুরলোকে বাস ক’রে ইন্দ্রের অনুমতিক্রমে এখন এই গন্ধমাদন পর্বতে আপনাদের সঙ্গে পুনর্মিলিত হয়েছি।

 অর্জুনের নিকট সকল বৃত্তান্ত শুনে যুধিষ্ঠির অতিশয় আনন্দিত হলেন। পরদিন তাঁর অনুরোধে অর্জুন দিব্যাস্ত্রসমূহের প্রয়োগ দেখাবার উপক্রম করলে নদী ও সমুদ্র বিক্ষুব্ধ, পর্বত বিদীর্ণ এবং বায়ুপ্রবাহ রুদ্ধ হ’ল; সূর্য উঠলেন না, অগ্নি জ্বললেন না, ব্রাহ্মণগণ বেদ স্মরণ করতে পারলেন না। তখন নারদ এসে বললেন, অর্জুন, দিব্যাস্ত্র বৃথা প্রয়োগ ক’রো না, তাতে মহাদোষ হয়। যুধিষ্ঠির, অর্জুন যখন শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করবেন তখন তুমি এইসব অস্ত্রের প্রয়োগ দেখবে।


॥আজগরপর্বাধ্যায়॥

৩৭। অজগর, ভীম ও যুধিষ্ঠির

 গন্ধমাদন পর্বতে কুবেরের উদ্যানে পঞ্চপাণ্ডব চার বৎসর সুখে বাস করলেন। তার পূর্বেই তাঁরা ছ বৎসর বনবাসে কাটিয়েছিলেন। একদিন ভীম অর্জুন নকুল সহদেব যুধিষ্ঠিরকে বললেন, আপনার প্রতিজ্ঞা রক্ষা ও প্রীতির জন্যই আমরা দুর্যোধনকে মারতে যাই নি, মান পরিহার ক’রে সুখভোগে বঞ্চিত হয়ে বনে বিচরণ করছি। আমাদের বনবাসের একাদশ বৎসর চলছে, পরে এক বৎসর দূরদেশে অজ্ঞাতবাস করলে দুর্যোধন জানতে পারবে না। এখন এখানে নিশ্চেষ্ট হয়ে না থেকে ভবিষ্যতে শত্রুজয়ের জন্য আমাদের প্রস্তুত হওয়া উচিত।

 যুধিষ্ঠির গন্ধমাদন পর্বত ছেড়ে যেতে সম্মত হলেন। ঘটোৎকচ অনুচরবর্গের সঙ্গে এসে তাঁদের সকলকে বহন করে নিয়ে চললেন। লোমশ দেবলোকে ফিরে গেলেন। পাণ্ডবগণ বৃষপর্বার আশ্রমে এক রাত্রি এবং বদরিকায় এক মাস বাস ক’রে কিরাতরাজ সুবাহুর দেশে উপস্থিত হলেন। সেখান থেকে ইন্দ্রসেন ও অন্যান্য ভৃত্য, পাচক, সারথি ও রথ প্রভৃতি সঙ্গে নিয়ে এবং ঘটোৎকচকে বিদায় দিয়ে তাঁরা যমুনার উৎপত্তিস্থানের নিকট বিশাখযূপ নামক বনে এলেন। এই মনোহর বনে তাঁরা এক বৎসর মৃগয়া করে কাটালেন।