পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১৬
মহাভারত

সর্বদা তাদের সদাচার শিক্ষা দিচ্ছেন। রুক্মিণীতনয় প্রদ্যুম্ন ও কুমার অভিমন্যু তাদের রথ ও অশ্বচালনা এবং বিবিধ অস্ত্রের প্রয়োগ শেখাচ্ছেন। তার পর কৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে বললেন, মহারাজ, যাদবসেনা আপনার আদেশের অপেক্ষা করছে, আপনি পাপী দুর্যোধনকে সবান্ধবে বিনষ্ট করুন। অথবা আপনি দ্যূতসভায় যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তাই পালন করুন, যাদবসেনাই আপনার শত্রু সংহার করবে, আপনি যথাকালে হস্তিনাপুর অধিকার করবেন।

 যুধিষ্ঠির কৃতাঞ্জলি হয়ে বললেন, কেশব, তুমিই আমাদের গতি, উপযুক্ত কালে তুমি আমাদের সর্বপ্রকারে সাহায্য করবে তাতে সংশয় নেই। আমরা প্রায় দ্বাদশ বৎসর বনবাসে কাটিয়েছি, অজ্ঞাতবাস শেষ ক’রেই তোমার শরণ নেব।

 এমন সময়ে মহাতপা মার্কণ্ডেয় মুনি সেখানে এলেন। তাঁর বয়স বহু সহস্র বৎসর কিন্তু তিনি দেখতে পঁচিশ বৎসরের যুবার ন্যায়। তিনি পূজা গ্রহণ ক’রে উপবিষ্ট হ’লে কৃষ্ণ তাঁকে বললেন, আমরা সকলে আপনার কাছে পুণ্যকথা শুনতে ইচ্ছা করি। এই সময়ে দেবর্ষি নারদও পাণ্ডবদের দেখতে এলেন, তিনিও মার্কণ্ডেয়কে অনুরোধ করলেন।

 মার্কণ্ডেয় ধর্ম অধর্ম কর্মফল ইহলোক পরলোক প্রভৃতি সম্বন্ধে অনেক ব্যাখ্যান করলেন। পাণ্ডবগণ বললেন, আমরা ব্রাহ্মণমাহাত্ম্য শুনতে ইচ্ছা করি, অপনি বলুন। মার্কণ্ডেয় এই আখ্যান বললেন।—হৈহয় বংশের এক রাজকুমার মৃগয়া করতে গিয়ে কৃষ্ণমৃগচর্মধারী এক ব্রাহ্মণকে দেখে তাঁকে মৃগ মনে ক’রে বধ করেন। তিনি ব্যাকুল হয়ে রাজধানীতে ফিরে এসে তাঁর পাপকর্মের কথা জানালেন। তখন হৈহয়রাজগণ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত মুনিকে দেখলেন এবং তাঁর সম্বন্ধে অনুসন্ধান করতে করতে মহর্ষি অরিষ্টনেমার আশ্রমে এলেন। মহর্ষি তাঁদের পাদ্য-অর্ঘাদি দিতে গেলে তাঁরা বললেন, আমরা ব্রহ্মহত্যা করেছি, সংস্কৃত হবার যোগ্য নই। তার পর সকলে পুনর্বার ঘটনাস্থলে গেলেন কিন্তু মৃতদেহ তখন দেখতে পেলেন না। তখন অরিষ্টনেমা বললেন, দেখুন তো, আমার এই পুত্রই সেই নিহত ব্রাহ্মণ কিনা। রাজারা অত্যন্ত বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, সেই মৃত মুনিকুমার কি ক’রে জীবিত হলেন? অরিষ্টনেমা বললেন, আমরা স্বধর্মের অনুষ্ঠান করি, ব্রাহ্মণদের যাতে মঙ্গল হয় তাই বলি, যাতে দোষ হয় এমন কথা বলি না। অতিথি ও পরিচারকদের ভোজনের পর যা অবশিষ্ট থাকে তাই আমরা খাই। আমরা শান্ত, সংযতেন্দ্রিয়, ক্ষমাশীল, তীর্থপর্যাটক ও দানপরায়ণ, পুণ্যদেশে তেজস্বী ঋষিগণের সংসর্গে বাস করি। যেসকল কারণে আমাদের মৃত্যুভয় নেই