পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
২২৫

জানব না কেন? ইনি এখানে সহস্র যজ্ঞ ক’রে যূপকাষ্ঠ প্রোথিত করেছিলেন; ইনি দক্ষিণ৷স্বরূপ যে সকল ধেনু দান করেছিলেন তাদেরই বিচরণের ফলে এই সরোবর উৎপন্ন হয়েছে।

 তখন স্বর্গ থেকে দেবরথ এল এবং ইন্দ্রদ্যুম্ন এই দৈববাণী শুনলেন— তোমার জন্য স্বর্গ প্রস্তুত, তুমি কীর্তিমান, তোমার যোগ্য স্থানে এস।

দিবং স্পৃশতি ভূমিঞ্চ শব্দঃ পুণ্যস্য কর্মণঃ।
যাবৎ স শব্দো ভবতি তাবৎ পুরুষ উচ্যতে॥
অকীর্তিঃ কীর্ত্যতে লোকে যস্য ভূতস্য কস্যচিৎ।
স পতত্যধমাল্লোঁকান্ যাবচ্ছব্দঃ প্রকীর্ত্যতে॥

—পুণ্যকর্মের শব্দ (প্রশংসাবাদ) স্বর্গ ও পৃথিবী স্পর্শ করে; যত কাল সেই শব্দ থাকে তত কালই লোকে পুরুষরূপে গণ্য হয়[১]। যত কাল কোনও লোকের অকীর্তি প্রচারিত হয় তত কাল সে নরকে পতিত থাকে।

 তার পর ইন্দ্রদ্যুম্ন[২] আমাদের সকলকে নিজ নিজ স্থানে রেখে দেবরথে স্বর্গে প্রস্থান করলেন।

৪৩। ধুন্ধুমার

 যুধিষ্ঠির জিজ্ঞাসা করলেন, ইক্ষ্বাকুবংশীয় রাজা কুবলাশ্ব কি কারণে ধুন্ধুমার নাম পান? মার্কণ্ডেয় বললেন, উতঙ্ক[৩] নামে খ্যাত এক মহর্ষি ছিলেন, তিনি মরুভূমির নিকটবর্তী রমণীয় প্রদেশে বাস করতেন। তাঁর কঠোর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে বিষ্ণু তাঁকে বর দিতে চাইলে তিনি বললেন, জগতের প্রভু হরিকে দেখলাম, এই আমার পর্যাপ্ত বর। বিষ্ণু তথাপি অনুরোধ করলে উতঙ্ক বললেন, আমার যেন ধর্মে সত্যে ও ইন্দ্রিয়সংযমে মতি এবং আপনার সান্নিধ্য লাভ হয়। বিষ্ণু বললেন, এ সমস্তই তোমার হবে, তা ভিন্ন তুমি যোগসিদ্ধ হয়ে মহৎ কার্য করবে। তোমার যোগবল অবলম্বন ক’রে রাজা কুবলাশ্ব ধুন্ধু নামক মহাসুরকে বধ করবেন।


  1. এই শ্লোক ৫৭-পরিচ্ছেদও আছে।
  2. ইনিই পুরীধামের জগন্নাথ বিগ্রহের প্রতিষ্ঠাতা এই খ্যাতি আছে।
  3. এঁর কথা আশ্রমবাসিকপর্ব ৫-৬-পরিচ্ছেদে আছে।