পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩২
মহাভারত

প্রায় সমস্ত দানব তাঁর শরাঘাতে বিনষ্ট হ’ল; যারা অবশিষ্ট রইল, কার্তিকের পারিষদগণ তাদের খেয়ে ফেললে। যুদ্ধস্থান দানবশূন্য হ’লে ইন্দ্র কার্তিককে আলিঙ্গন করে বললেন, মহাবাহু, এই মহিষদানব ব্রহ্মার নিকট বর পেয়ে দেবগণকে তৃণতুল্য জ্ঞান করত, তুমি এই দেবশত্রু ও তার তুল্য শত শত দানবকে সংহার করেছ। তুমি উমাপতি শিবের ন্যায় প্রভাবশালী, ত্রিভুবনে তোমার কীর্তি অক্ষয় হয়ে থাকবে।


॥ দ্রৌপদীসত্যভামাসংবাদপর্বাধ্যায় ॥

৪৬। দ্রৌপদী-সত্যভামা-সংবাদ

 পাণ্ডবগণ যখন মার্কণ্ডেয়র কথা শুনছিলেন তখন রাজা সত্রাজিতের কন্যা এবং কৃষ্ণের প্রিয়া মহিষী সত্যভামা নির্জনে দ্রৌপদীকে বললেন, কল্যাণী, তোমার স্বামীরা লোকপালতুল্য মহাবীর জনপ্রিয় যুবক, এদের সঙ্গে তুমি কিরূপ আচরণ কর? এঁরা তোমার বশে চলেন, কখনও রাগ করেন না, সকল কাজই তোমার মুখে চেয়ে করেন, এর কারণ কি? ব্রতচর্যা জপতপ মন্ত্রৌষধি শিকড় বা অন্য যে উপায় তুমি জান তা বল, যাতে কৃষ্ণকেও আমি সর্বদা বশে রাখতে পারি।

 পতিব্রতা মহাভাগা দ্রৌপদী উত্তর দিলেন, সত্যভামা, অসৎ স্ত্রীরা যা করে তাই তুমি জানতে চাচ্ছ, তা আমি কি করে বলব? কৃষ্ণের প্রিয়া হয়ে এমন প্রশ্ন করাই তোমার অনুচিত। স্ত্রী কোনও মন্ত্র বা ঔষধ প্রয়োগ করতে চায় জানলেই স্বামী উদ্‌বিগ্ন হন, গৃহে সর্প এলে লোকে যেমন হয়। মন্ত্রাদিতে স্বামীকে কখনও বশ করা যায় না। শত্রুর প্ররোচনায় স্ত্রীলোকে ঔষধ ভেবে স্বামীকে বিষ দেয়, তার ফলে উদরি শ্বিত্র জরা পুরুষত্বহানি জড়তা অন্ধতা বধিরতা প্রভৃতি ঘটে। আমি যা করি তা শোন। সর্বদা অহংকার ও কামক্রোধ ত্যাগ ক’রে আমি সপত্নীদের সঙ্গে পাণ্ডবগণের পরিচর্যা করি। ধনবান, রূপবান, অলংকারধারী, যুবা, দেবতা, মানুষ বা গন্ধর্ব— অন্য কোনও পুরুষ আমি কামনা করি না। স্বামীরা স্নান ভোজন শয়ন না করলে আমিও করি না, তাঁরা অন্য স্থান থেকে গৃহে এলে আমি আসন ও জল দিয়ে তাঁদের সংবর্ধনা করি। আমি রন্ধন-ভোজনের পাত্র, খাদ্য ও গৃহ পরিষ্কৃত রাখি, তিরস্কার করি না, মন্দ স্ত্রীদের সঙ্গে মিশি না, গৃহের বাইরে বেশী যাই না, অতিহাস্য বা অতিক্রোধ করি না। ভর্তা যা আহার বা পান করেন না আমিও তা