পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
২৩৩

করি না, তাঁদের উপদেশে চলি। আত্মীয়দের সঙ্গে ব্যবহার, ভিক্ষাদান, শ্রাদ্ধ, পর্বকালে বন্ধন, মানী জনের সম্মান প্রভৃতি সম্বন্ধে আমার শ্বশ্রুঠাকুরানী যা ব’লে দিয়েছেন এবং আমার যা জানা আছে তাই আমি করি। রাজা যুধিষ্ঠির যখন পৃথিবী পালন করতেন তখন অন্তঃপুরের সকলে এবং গোপালক মেষপালক পর্যন্ত সকল ভৃত্য কি করে না করে তার সংবাদ আমি রাখতাম। রাজ্যের সমস্ত আয়ব্যয়ের বিষয় কেবল আমিই জানতাম। পাণ্ডবরা আমার উপর পোষ্যবর্গের ভার দিয়ে ধর্মকার্যে নিরত থাকতেন। আমি সকল সুখভোগ ত্যাগ ক’রে দিবারাত্র আমার কর্তব্যের ভার বহন করতাম, কোনও দুষ্ট লোকে তাতে বাধা দিতে পারত না। আমি চিরকাল সকলের আগে জাগি, সকলের শেষে শুই। সত্যভামা, পতিকে বশ করবার এইসব উপায়ই আমি জানি, অসৎ স্ত্রীদের পথে আমি চলি না।

 সত্যভামা বললেন, পাঞ্চালী, আমাকে ক্ষমা কর, তুমি আমার সখী, সেজন্য পরিহাস করছিলাম। দ্রৌপদী বললেন, সখী, যে উপায়ে তুমি অন্য নারীদের প্রভাব থেকে ভর্তার মন আকর্ষণ করতে পারবে তা আমি বলছি শোন। তুমি সর্বদা সৌহার্দ্য প্রেম ও প্রসাধন দ্বারা কৃষ্ণের আরাধনা কর। তাঁকে উত্তম খাদ্য মাল্য গন্ধদ্রব্য প্রভৃতি দাও, অনুকূল ব্যবহার কর, যাতে তিনি বোঝেন যে তিনি তোমার প্রিয়। তিনি যেন জানতে পারেন যে তুমি সর্বপ্রযত্নে তাঁর সেবা করছ। বাসুদেব তোমাকে যা বলবেন তা গোপনীয় না হ’লেও প্রকাশ করবে না। যাঁরা তোমার স্বামীর প্রিয় ও অনুরক্ত তাঁদের বিবিধ উপায়ে ভোজন করাবে, যারা বিদ্বেষের পাত্র ও অহিতকারী তাদের বর্জন করবে। পুরুষের কাছে মত্ততা ও অসাবধানতা দেখাবে না, মৌন অবলম্বন করবে, নির্জন স্থানে কুমার প্রদ্যুম্ন বা শাম্বেরও সেবা করবে না। সদ্‌বংশজাত নিষ্পাপ সতী স্ত্রীদের সঙ্গেই সখিত্ব করবে, যারা ক্রোধপ্রবণ মত্ত অতিভোজী চোর দুষ্ট আর চপল তাদের সঙ্গে মিশবে না। তুমি মহার্ঘ মাল্য আভরণ ও অঙ্গরাগ ধারণ ক’রে পবিত্র গন্ধে বাসিত হয়ে ভর্তার সেবা করবে।

 এই সময়ে মার্কণ্ডেয় প্রভৃতি ব্রাহ্মণগণ ও কৃষ্ণ চ’লে যাবার জন্য সত্যভামাকে ডাকলেন। সত্যভামা দ্রৌপদীকে আলিঙ্গন ক’রে বললেন, কৃষ্ণা, তুমি উৎকণ্ঠা দূর কর, তোমার দেবতুল্য পতিগণ জয়ী হয়ে আবার রাজ্য পাবেন। তোমার দুঃখের দশায় যারা অপ্রিয় আচরণ করেছিল তারা সকলেই যমালয়ে গেছে এই তুমি ধ’রে নাও। প্রতিবিন্ধ্য প্রভৃতি তোমার পঞ্চ পুত্র দ্বারকায় অভিমন্যুর তুল্যই সুখে বাস করছে, সুভদ্রা তোমার ন্যায় তাদের যত্ন করছেন। প্রদ্যুম্নের মাতা রুক্মিণীও তাদের স্নেহ করেন। আমার শ্বশুর (বসুদেব) তাদের খাওয়া পরার উপর দৃষ্টি রাখেন,