পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৬
মহাভারত

হলেন। তখন গন্ধর্বরা দুঃশাসন প্রভৃতি এবং তাঁদের সকলের পত্নীদের ধ’রে নিয়ে দ্রুতবেগে চ’লে গেল।

 গন্ধর্বগণ দুর্যোধনকে হরণ করে নিয়ে গেলে পরাজিত কুরুসৈন্য বেশ্যা ও বণিক প্রভৃতি পাণ্ডবগণের শরণাপন্ন হ’ল। দুর্যোধনের বৃদ্ধ মন্ত্রীরা দীনভাবে যুধিষ্ঠিরের সাহায্য ভিক্ষা করলেন। ভীম বললেন, আমরা গজবাজি নিয়ে যুদ্ধ ক’রে অনেক চেষ্টায় যা করতাম গন্ধর্বরা তা সম্পন্ন করেছে। দুর্যোধন যে উদ্দেশ্যে এসেছিল তা সিদ্ধ না হয়ে অন্য প্রকার ঘটেছে। আমরা নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছি, কিন্তু ভাগ্যক্রমে এমন লোকও আছেন যিনি আমাদের প্রিয়সাধনের ভার স্বয়ং নিয়েছেন। ভীমের এই কর্কশ কথা শুনে যুধিষ্ঠির বললেন, এখন নিষ্ঠুরতার সময় নয়, কৌরবগণ ভয়ার্ত ও বিপদগ্রস্ত হয়ে আমাদের শরণ নিয়েছে। জ্ঞাতিদের মধ্যে ভেদ হয়, কলহ হয়, কিন্তু তার জন্য কুলধর্ম নষ্ট হ’তে পারে না। দুর্যোধন আর কুরুনারীদের হরণের ফলে আমাদের কুল নষ্ট হ’তে বসেছে, দুর্বুদ্ধি চিত্রসেন আমাদের অবজ্ঞা ক’রে এই দুষ্কার্য করেছেন। বীরগণ, তোমরা বিলম্ব ক’রো না, ওঠ, চার ভ্রাতায় মিলে দুর্যোধনকে উদ্ধার কর। ভীম, বিপন্ন দুর্যোধন জীবনরক্ষার জন্য তোমাদেরই বাহুবল প্রার্থনা করেছে এর চেয়ে গৌরবের বিষয় আর কি হতে পারে? আমি এখন সাদ্যস্ক যজ্ঞে নিযুক্ত আছি, নয়তো বিনা বিচারে নিজেই তার কাছে দৌড়ে যেতাম। তোমরা মিষ্ট কথায় দুর্যোধনাদির মুক্তি চাইবে, যদি তাতে ফল না হয় তবে বলপ্রয়োগে গন্ধর্বরাজকে পরাস্ত করবে।

 ভীম অর্জুন নকুল সহদেব বর্ম ধারণ ক’রে সশস্ত্র হয়ে রথারোহণে যাত্রা করলেন, তাঁদের দেখে কৌরবসৈন্যগণ আনন্দধ্বনি করতে লাগল। গন্ধর্বসেনার নিকটে গিয়ে অর্জুন বললেন, আমাদের ভ্রাতা দুর্যোধনকে ছেড়ে দাও। গন্ধর্বরা ঈষৎ হাস্য ক’রে বললে, বৎস, আমরা দেবরাজ ভিন্ন আর কারও আদেশ শুনি না। অর্জুন আবার বললেন, যদি ভাল কথায় না ছাড় তবে বলপ্রয়োগ করব। তার পর গন্ধর্ব ও পাণ্ডবগণের যুদ্ধ আরম্ভ হ’ল। অর্জুনের শরবর্ষণে গন্ধর্বসেনা বিনষ্ট হচ্ছে দেখে চিত্রসেন গদাহস্তে যুদ্ধ করতে এলেন, অর্জুন তাঁর গদা শরাঘাতে কেটে ফেললেন। চিত্রসেন মায়াবলে অন্তর্হিত হয়ে যুদ্ধ করতে লাগলেন। অর্জুন ক্রুদ্ধ হয়ে শব্দবেধী বাণ দিয়ে তাঁকে বধ করতে উদ্যত হলেন। তখন চিত্রসেন দর্শন দিয়ে বললেন, আমি তোমার সখা।

 চিত্রসেনকে দুর্বল দেখে অর্জুন তাঁর বাণ সংহরণ ক’রে সহাস্যে বললেন, বীর, তুমি দুর্যোধনাদি আর তাঁর ভার্যাদের হরণ করেছ কেন? চিত্রসেন বললেন,