পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫৪
মহাভারত

ক’রে চ’লে গেলেন। রাজা অশ্বপতি বিবাহের উপকরণ সংগ্রহ করলেন এবং শুভদিনে সাবিত্রী ও পুরোহিতাদিকে নিয়ে দ্যুমৎসেনের আশ্রমে উপস্থিত হলেন।

 অশ্বপতি বললেন, রাজর্ষি, আমার এই সুন্দরী কন্যাকে আপনি পুত্রবধূরূপে নিন। দ্যুমৎসেন বললেন, আমরা রাজ্যচ্যুত হয়ে বনবাসে আছি, আপনার কন্যা কি ক’রে কষ্ট সইবেন? অশ্বপতি বললেন, সুখ বা দুঃখ চিরস্থায়ী নয়, আমার কন্যা আর আমি তা জানি। আমি আশা ক’রে আপনার কাছে এসেছি, আমাকে প্রত্যাখ্যান করবেন না। দ্যুমৎসেন সম্মত হলেন, আশ্রমবাসী ব্রাহ্মণগণের সমক্ষে সাবিত্রী-সত্যবানের বিবাহ যথাবিধি সম্পন্ন হ’ল। উপযুক্ত বসনভূষণ সহ কন্যাকে দান করে অশ্বপতি আনন্দিতমনে প্রস্থান করলেন। তার পর সাবিত্রী তাঁর সমস্ত আভরণ খুলে ফেলে বল্কল ও গৈরিক বস্ত্র ধারণ করলেন এবং সেবার দ্বারা শ্বশুর শাশুড়ী ও স্বামীকে পরিতুষ্ট করলেন। কিন্তু নারদের বাক্য সর্বদাই তাঁর মনে ছিল।

 এইরূপে অনেক দিন গত হ’ল। সাবিত্রী দিন গণনা করে দেখলেন, আর চার দিন পরে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হবে। তিনি ত্রিরাত্র উপবাসের সংকল্প করলেন। দ্যুমৎসেন দুঃখিত হয়ে তাঁকে বললেন, রাজকন্যা, তুমি অতি কঠোর ব্রত আরম্ভ করেছ, তিন রাত্রি উপবাস অতি দুঃসাধ্য। সাবিত্রী উত্তর দিলেন, পিতা, আপনি ভাববেন না, আমি ব্রত উদ্‌যাপন করতে পারব। সত্যবানের মৃত্যুর দিনে সাবিত্রী পূর্বাহ্ণের সমস্ত কার্য সম্পন্ন করলেন এবং গুরুজনদের প্রণাম ক’রে কৃতাঞ্জলি হয়ে রইলেন। তপোবনবাসী সকলেই তাঁকে আশীর্বাদ করলেন, অবিধবা হও। সাবিত্রী ধ্যানস্থ হয়ে মনে মনে বললেন, তাই যেন হয়। শ্বশুর-শাশুড়ী তাঁকে বললেন, তোমার ব্রত সমাপ্ত হয়েছে, এখন আহার কর। সাবিত্রী বললেন, সূর্যাস্তের পর আহার করব এই সংকল্প করেছি।

 সত্যবান কাঁধে কুঠার নিয়ে বনে যাচ্ছেন দেখে সাবিত্রী বললেন, আমিও যাব, তোমার সঙ্গ ছাড়ব না। সত্যবান বললেন, তুমি পূর্বে কখনও বনে যাও নি, পথও কষ্টকর, তার উপর উপবাস ক’রে দুর্বল হয়ে আছ, কি ক’রে পদব্রজে যাবে? সাবিত্রী বললেন, উপবাসে আমার কষ্ট হয় নি, যাবার জন্য আমার উৎসাহ হয়েছে, তুমি বারণ ক’রো না। সত্যবান বললেন, তবে আমার পিতা-মাতার অনুমতি নাও, তা হ’লে আমার দোষ হবে না। সাবিত্রীর অনুরোধ শুনে দ্যুমৎসেন বললেন, সাবিত্রী আমাদের পুত্রবধূ হবার পর কিছু চেয়েছেন ব’লে মনে পড়ে না, অতএব এঁর অভিলাষ পূর্ণ হ’ক। পুত্রী, তুমি সত্যবানের সঙ্গে সাবধানে যেয়ো। অনুমতি পেয়ে