পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
২৫৯

 এই সাবিত্রীর উপাখ্যান যে ভক্তিসহকারে শোনে সে সুখী ও সর্ববিষয়ে সিদ্ধকাম হয়, কখনও দুঃখ পায় না।


॥ কুণ্ডলাহরণপর্বাধ্যায়

৫৬। কর্ণের কবচ-কুণ্ডল দান

 লোমশ মুনি যুধিষ্ঠিরকে জানিয়েছিলেন[১] যে ইন্দ্র কর্ণের সহজাত কুণ্ডল ও কবচ হরণ ক’রে তাঁর শক্তিক্ষয় করবেন। পাণ্ডবদের বনবাসের দ্বাদশ বৎসর প্রায় অতিক্রান্ত হ’লে ইন্দ্র তাঁর প্রতিজ্ঞাপালনে উদ্‌যোগী হলেন। ইন্দ্রের অভিপ্রায় বুঝে সূর্য নিদ্রিত কর্ণের নিকট গেলেন এবং স্বপ্নযোগে ব্রাহ্মণের মূর্তিতে দর্শন দিয়ে বললেন, বৎস, পাণ্ডবদের হিতের জন্য ইন্দ্র তোমার কুণ্ডল ও কবচ হরণ করতে চান। তিনি জানেন যে সাধুলোকে তোমার কাছে কিছু চাইলে তুমি দান কর। তিনি ব্রাহ্মণের বেশে কবচ-কুণ্ডল ভিক্ষা করতে তোমার কাছে যাবেন। তুমি দিও না, তাতে তোমার আয়ুক্ষয় হবে।

 কর্ণ প্রশ্ন করলেন, ভগবান, আপনি কে? সূর্য বললেন, আমি সহস্রাংশু সূর্য, তোমার প্রতি স্নেহের জন্য দেখা দিয়েছি। কর্ণ বললেন, বিভাবসু, সকলেই আমার এই ব্রত জানে যে প্রার্থী ব্রাহ্মণকে আমি প্রাণও দিতে পারি। ইন্দ্র যদি পাণ্ডবদের হিতের জন্য ব্রাহ্মণবেশে কবচ-কুণ্ডল ভিক্ষা করেন তবে আমি অবশ্যই দান করব, তাতে আমার কীর্তি এবং ইন্দ্রের অকীর্তি হবে।

 কর্ণকে নিবৃত্ত করবার জন্য সূর্য বহু চেষ্টা করলেন, কিন্তু কর্ণ সম্মত হলেন না। তিনি বললেন, আপনি উদ্‌বিগ্ন হবেন না, অর্জুন যদি কার্তবীর্যার্জুনের তুল্যও হয় তথাপি তাকে আমি যুদ্ধে জয় করব। আপনি তো জানেন যে আমি পরশুরাম ও দ্রোণের নিকট অস্ত্রবল লাভ করেছি। সূর্য বললেন, তবে তুমি ইন্দ্রকে এই কথা বলো, সহস্রাক্ষ, আপনি আমাকে শত্রুনাশক অব্যর্থ শক্তি অস্ত্র দিন তবে কবচ-কুণ্ডল দেব। কর্ণ সম্মত হলেন।

 প্রত্যহ মধ্যাহ্ণকালে কর্ণ স্নানের পর জল থেকে উঠে সূর্যের স্তব করতেন, সেই সময়ে ধনপ্রার্থী ব্রাহ্মণেরা তাঁর কাছে আসতেন, তখন তাঁর কিছুই অদেয় থাকত না। একদিন ইন্দ্র ব্রাহ্মণের বেশে তাঁর কাছে এসে বললেন, কর্ণ, তুমি যদি সত্যব্রত


  1. বনপর্ব, ২০-পরিচ্ছেদে।