পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারত

মহাভারত সংক্ষেপে বলেছেন আবার সবিস্তারেও বলেছেন। কোনও কোনও ব্রাহ্মণ এই গ্রন্থ আদি থেকে, কেউ আস্তীকের উপাখ্যান থেকে, কেউ বা উপরিচরের উপাখ্যান থেকে পাঠ করেন।

 মহাভারত রচনার পর ব্যাসদেব ভেবেছিলেন, কোন্‌ উপায়ে এই ইতিহাস শিষ্যদের অধ্যয়ন করাব? তখন ভগবান ব্রহ্মা তাঁর কাছে আবির্ভূত হয়ে বললেন, তুমি গণেশকে স্মরণ কর, তিনি তোমার গ্রন্থের লিপিকার হবেন। ব্যাস গণেশকে অনুরোধ করলে তিনি বললেন, আমি সম্মত আছি, কিন্তু আমার লেখনী ক্ষণমাত্র থামবে না। ব্যাস ভাবলেন, আমার রচনায় আট হাজার আট শ এমন কূটশ্লোক আছে যার অর্থ কেবল আমি আর আমার পুত্র শুক বুঝতে পারি, সঞ্জয় পারেন কিনা সন্দেহ। ব্যাস গণেশকে বললেন, আমি যা ব’লে যাব আপনি তার অর্থ না বুঝে লিখতে পারবেন না। গণেশ বললেন, তাই হবে। গণেশ সর্বজ্ঞ হ’লেও কূটশ্লোক লেখবার সময় তাঁকে ভাবতে হত, সেই অবসরে ব্যাস অন্য বহু শ্লোক রচনা করতেন।[১]

 রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর ব্যাসদেব তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন। ভগবান ব্যাস এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। উপাখ্যান সহিত এই মহাভারতে লক্ষ শ্লোক আছে। উপাখ্যানভাগ বর্জন ক’রে ব্যাস চব্বিশ হাজার শ্লোকে এক সংহিতা রচনা করেছেন, পণ্ডিতগণের মতে তাই প্রকৃত মহাভারত। তা ছাড়া ব্যাস দেড় শ শ্লোকে সমস্ত পর্বের সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত অনুক্রমণিকা-অধ্যায়ে দিয়েছেন। ব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনর লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। ব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন, আমি তাই বলব। পূর্বকালে দেবতারা তুলাদণ্ডে ওজন ক’রে দেখেছিলেন যে উপনিষৎসহ চার বেদের তুলনায় একখানি এই গ্রন্থ মহত্ত্বে ও ভারবত্তায় অধিক, সেজন্যই এর নাম মহাভারত।

 অনন্তর সৌতি অতি সংক্ষেপে মহাভারতের মূল আখ্যান এবং পর্বসংগ্রহ (অর্থাৎ প্রত্যেক পর্বের বিষয়সমূহ) বর্ণনা করলেন।


  1. মহাভারতের সকল সংস্করণে এই আখ্যান নেই।