পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিরাটপর্ব
২৭১

থাকবে, ভিতরে বাইরে সর্বত্র তুমি পরিদর্শন করতে পারবে। কেউ যদি অর্থাভাবের জন্য তোমার কাছে কিছু প্রার্থনা করে তবে আমাকে জানিও, যা প্রয়োজন তাই আমি দান করব।

 তার পর সিংহবিক্রম ভীম এলেন, তাঁর পরিধানে কৃষ্ণ বস্ত্র; হাতে খন্তি হাতা ও কোষমুক্ত কৃষ্ণবর্ণ অসি। বিরাট সভাস্থ লোকদের জিজ্ঞাসা করলেন, সিংহের ন্যায় উন্নতস্কন্ধ অতি রূপবান কে এই যুবা? ভীম কাছে এসে বিনীতবাক্যে বললেন, মহারাজ, আমি পাচক, আমার নাম বল্লব, আমি উত্তম ব্যঞ্জন রাঁধতে পারি, পূর্বে রাজা যুধিষ্ঠির আমার প্রস্তুত সূপ প্রভৃতি ভোজন করতেন। আমার তুল্য বলবানও কেউ নেই, আমি বাহুযুদ্ধে পটু, হস্তী ও সিংহের সঙ্গে যুদ্ধ করে আমি আপনাকে তুষ্ট করব। বিরাট বললেন, তোমাকে আমি পাকশালার কর্মে নিযুক্ত করলাম, সেখানে যেসব পাচক আছে তুমি তাদের অধ্যক্ষ হবে। কিন্তু এই কর্ম তোমার উপযুক্ত নয়, তুমি আসমুদ্র পৃথিবীর রাজা হবার যোগ্য।

 অসিতনয়না দ্রৌপদী তাঁর কুঞ্চিত কেশপাশ মস্তকের দক্ষিণ পার্শ্বে তুলে কৃষ্ণবর্ণ পরিধেয় বস্ত্র দিয়ে আবৃত করে বিচরণ করছিলেন। বিরাট রাজার মহিষী কেকয়রাজকন্যা সুদেষ্ণা প্রাসাদের উপর থেকে দেখতে পেয়ে তাঁকে ডেকে আনালেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, ভদ্রে, তুমি কে, কি চাও? দ্রৌপদী উত্তর দিলেন, রাজ্ঞী, আমি সৈরিন্ধ্রী, যিনি আমাকে পোষণ করবেন আমি তাঁর কর্ম করব। সুদেষ্ণা বললেন, ভাবিনী, তুমি নিজেই দাসদাসীকে আদেশ দেবার যোগ্য। তোমার পায়ের গ্রন্থি উচ্চ নয়, দুই উরু ঠেকে আছে, তোমার নাভি কণ্ঠস্বর ও স্বভাব নিম্ন, স্তন নিতম্ব ও নাসিকা উন্নত, পদতল করতল ও ওষ্ঠ রক্তবর্ণ, তুমি হংসগদ্‌গদভাষিণী, সুকেশী সুস্তনী। তুমি কাশ্মীরী তুরঙ্গমীর ন্যায় সুদর্শনা। তুমি কে? যক্ষী দেবী গন্ধর্বী না অপ্সরা?

 দ্রৌপদী বললেন, সত্য বলছি আমি সৈরিন্ধ্রী। কেশসংস্কার, চন্দনাদি পেষণ, বিচিত্র মাল্যরচনা প্রভৃতি কর্ম জানি। আমি পূর্বে কৃষ্ণের প্রিয়া ভার্যা সত্যভামা এবং পাণ্ডবমহিষী কৃষ্ণার পরিচর্যা করতাম। তাঁদের কাছে আমি উত্তম খাদ্য ও প্রয়োজনীয় বসন পেতাম। দেবী সত্যভামা আমার নাম মালিনী রেখেছিলেন। সুদেষ্ণা বললেন, রাজা যদি তোমার প্রতি লুব্ধ না হন তবে আমি তোমাকে মাথায় ক’রে রাখব। এই রাজভবনে যেসকল নারী আছে তারা একদৃষ্টিতে তোমাকে দেখছে,