পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব

॥ পৌষ্যপর্বাধ্যায়॥

২। জনমেজয়ের শাপ - আরশি, উপমন ও বেদ

 সৌতি বললেন।— পরীক্ষিৎপুত্র জনমেজয় তাঁর তিন ভ্রাতার সঙ্গে কুরুক্ষেত্রে এক যজ্ঞ করছিলেন এমন সময় সেখানে একটি কুকুর এল। জনমেজয়ের ভ্রাতারা তাকে প্রহার করলেন, সে কাঁদতে কাঁদতে তার মাতার কাছে গেল। কুক্কুরী কুদ্ধ হয়ে যজ্ঞস্থলে এসে বললে, আমার পুত্রকে বিনা দোষে মারলে কেন? জনমেজয় প্রভৃতি কোনও উত্তর দিলেন না। কুক্কুরী বললে, এ কোনও অপরাধ করে নি তথাপি প্রহত হয়েছে; তোমার উপরেও অতর্কিত বিপদ এসে পড়বে।

 দেবশুনী সরমার এই অভিশাপ শুনে জনমেজয় অত্যন্ত চিন্তাকুল হলেন। যজ্ঞ শেষ হলে তিনি হস্তিনাপুরে ফিরে এসে শাপমোচনের জন্য উপযুক্ত পুরোহিতের সন্ধান করতে লাগলেন। একদিন তিনি মৃগয়া করতে গিয়ে শ্রুতশ্রবা ঋষির আশ্রমে উপস্থিত হলেন এবং নমস্কার করে বললেন, ভগবান, আপনার পুত্র সোমশ্রবাকে দিন, তিনি আমার পুরোহিত হবেন। শ্রুতশ্রবা বললেন, আমার এই পুত্র সর্পীর গর্ভজাত, এ মহাতপস্বী ও বেদজ্ঞ, মহাদেবের শাপ ভিন্ন অন্য সমস্ত শাপ নিবারণ করতে পারে। কিন্তু এর একটি গূঢ় ব্রত আছে, কোনও ব্রাহ্মণ কিছু প্রার্থনা করলে এ তা অবশ্যই পূরণ করবে। যদি তুমি তাতে সম্মত হও তবে একে নিয়ে যাও। জনমেজয় ঋষিপুত্রকে নিয়ে গিয়ে ভ্রাতাদের বললেন, আমি একে উপাধ্যায়রূপে বরণ করেছি, ইনি যা বলবেন তোমরা তা নির্বিচারে করবে। এই আদেশ দিয়ে জনমেজয় তক্ষশিলা দেশ জয় করতে গেলেন।[১]

 এই সময়ে আয়োদ ধৌম্য[২] নামে এক ঋষি ছিলেন, তার তিন শিষ্য— উপমন্যু, আরুণি ও বেদ। তিনি তাঁর পাঞ্চালদেশীয় শিষ্য আরুণিকে আজ্ঞা দিলেন, যাও, তুমি আমার ক্ষেত্রের আল বাঁধ। আরুণি গুরুর আজ্ঞা পালন করতে গেলেন, কিন্তু আল বাঁধতে না পেরে অবশেষে শুয়ে পড়ে জলরোধ করলেন। আরুণি ফিরে এলেন না দেখে ধৌম্য তার অপর দুই শিষ্যের সঙ্গে ক্ষেত্রে গিয়ে ডাকলেন, বৎস আরুণি, কোথায় আছ, এস। আরুণি উঠে এসে বললেন, আমি জলপ্রবাহ রোধ করতে না পেরে সেখানে শুয়ে ছিলাম, এখন আপনি ডাকতে উঠে এসেছি, আজ্ঞা করুন কি

  1. এই বৃত্তান্তের সঙ্গে পরবর্তী আখ্যানের যােগসূত্র স্পষ্ট নয়।
  2. পাঠান্তর—আপােদ ধৌম্য।