পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিরাটপর্ব
২৭৯

অন্যের পেষা চন্দন আবার তাঁর রোচে না। ভীম, আমি দেবতাদের অপ্রিয় কোনও কার্য করিনি, আমার মরা উচিত, অভাগিনী ব’লেই বেঁচে আছি।

 শোকবিহ্বলা দ্রৌপদীর হাত ধ’রে ভীম সজলনয়নে বললেন, ধিক আমার বাহুবল, ধিক অর্জুনের গাণ্ডীব, তোমার রক্তাভ করযুগলে কড়া পড়েছে তাও দেখতে হ’ল! আমি সভামধ্যেই বিরাটের নিগ্রহ করতাম, পদাঘাতে কীচকের মস্তক চূর্ণ করতাম, মৎস্যরাজের লোকদেরও শাস্তি দিতাম, কিন্তু ধর্মরাজ কটাক্ষ ক’রে আমাকে নিবারণ করলেন। কল্যাণী, তুমি আর অর্ধমাস কষ্ট সয়ে থাক, তার পর ত্রয়োদশ বর্ষ পূর্ণ হ’লে তুমি রাজাদের রাজ্ঞী হবে।

 দ্রৌপদী বললেন, আমি দুঃখ সইতে না পেরেই অশ্রুমোচন করছি, রাজা যুধিষ্ঠিরকে তিরস্কার করা আমার উদ্দেশ্য নয়। পাছে বিরাট আমার রূপে অভিভূত হন এই আশঙ্কায় সুদেষ্ণা উদ্‌বিগ্ন হয়ে আছেন, তা জেনে এবং নিজের দুর্বুদ্ধিবশে দুরাত্মা কীচক আমাকে প্রার্থনা করছে। তোমরা যদি কেবল অজ্ঞাতবাসের প্রতিজ্ঞা পালনেই রত থাক, তবে আমি আর তোমাদের ভার্যা থাকব না। মহাবল ভীমসেন, তুমি জটাসুরের হাত থেকে আমাকে উদ্ধার করেছিলে, জয়দ্রথকে জয় করেছিলে, এখন আমার অপমানকারী পাপিষ্ঠ কীচককে বধ কর, প্রস্তরের উপর মৃৎকুম্ভের ন্যায় তার মস্তক চূর্ণ কর। সে জীবিত থাকতে যদি সূর্যোদয় হয় তবে আমি বিষ আলোড়ন ক’রে পান করব, তার বশীভূত হব না। এই ব’লে দ্রৌপদী ভীমের বক্ষে লগ্ন হয়ে কাঁদতে লাগলেন।

৮। কীচকবধ

 ভীম বললেন, যাজ্ঞসেনী, তুমি যা চাও তাই হবে, আমি কীচককে সবান্ধবে হত্যা করব। তুমি তাকে বল সে যেন সন্ধ্যার সময় নৃত্যশালায় তোমার প্রতীক্ষা করে। কন্যারা সেখানে দিবসে নৃত্য করে, রাত্রিতে নিজের নিজের গৃহে চলে যায়। সেখানে একটি উত্তম পর্যঙ্ক আছে, তার উপরেই আমি কীচককে তার পূর্ব পুরুষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাব।

 পরদিন প্রাতঃকালে কীচক রাজভবনে গিয়ে দ্রৌপদীকে বললেন, আমি রাজসভায় বিরাটের সমক্ষে তোমাকে পদাঘাত করেছিলাম, কেউ তোমাকে রক্ষা করে নি, কারণ আমি পরাক্রান্ত। বিরাট কেবল নামেই মৎস্যদেশের রাজা, বস্তুত সেনাপতি আমিই রাজা। সুশ্রোণী, তুমি আমাকে ভজনা কর, তোমাকে শত স্বর্ণমুদ্রা দিচ্ছি।