পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮০
মহাভারত

শত দাসী, শত দাস এবং অশ্বতরীযুক্ত একটি রথও তোমাকে দেব। দ্রৌপদী বললেন, কীচক, এই প্রতিজ্ঞা কর যে তোমার সখা বা ভ্রাতা কেউ আমাদের সংগম জানতে পারবে না; আমি আমার গন্ধর্ব পতিদের ভয় করি। কীচক বললেন, ভীরু, আমি একাকীই তোমার শূন্য গৃহে যাব, গন্ধর্বরা জানতে পারবে না। দ্রৌপদী বললেন, রাত্রিতে নৃত্যশালা শূন্য থাকে, তুমি অন্ধকারে সেখানে যেয়ো।

 কীচকের সঙ্গে এইরূপ আলাপের পর সেই দিনের অবশিষ্ট ভাগ দ্রৌপদীর কাছে একমাসের তুল্য দীর্ঘ বোধ হ’তে লাগল। তিনি পাকশালার ভীমের কাছে গিয়ে সংবাদ দিলেন। ভীম আনন্দিত হয়ে বললেন, আমি সত্য ধর্ম ও ভ্রাতাদের নামে শপথ ক’রে বলছি, আমি গুপ্ত স্থানে বা প্রকাশ্যে কীচককে চূর্ণ করব, মৎস্যদেশের লোকে যদি যুদ্ধ করতে আসে, তবে তাদেরও সংহার করব, তার পর দুর্যোধনকে বধ ক’রে রাজ্যলাভ করব; যুধিষ্ঠির বিরাটের সেবা করতে থাকুন। দ্রৌপদী বললেন, বীর, তুমি আমার জন্য সত্যভ্রষ্ট হয়ো না, কীচককে গোপনে বধ কর।

 সিংহ যেমন মৃগের জন্য প্রতীক্ষায় থাকে সেইরূপ ভীম রাত্রিকালে নৃত্যশালায় গিয়ে কীচকের জন্য প্রতীক্ষা করতে লাগলেন। সৈরিন্ধ্রীর সঙ্গে মিলনের আশায় কীচক সুসজ্জিত হয়ে সেই অন্ধকারময় বৃহৎ গৃহে এলেন এবং শয্যায় শয়ান ভীমকে স্পর্শ ক’রে আনন্দে অস্থির হয়ে বললেন, তোমার গৃহে আমি বহু ধন, রত্ন, পরিচ্ছদ ও দাসী পাঠিয়ে দিয়েছি; আর দেখ, আমার গৃহের সকল স্ত্রীরাই বলে যে আমার তুল্য সুবেশ ও সুদর্শন পুরুষ আর নেই।

 ভীম বললেন, আমার সৌভাগ্য যে তুমি সুদর্শন এবং নিজেই নিজের প্রশংসা করছ; তোমার তুল্য স্পর্শ আমি পূর্বে কখনও পাই নি। তার পর মহাবাহু ভীম সহসা শয্যা থেকে উঠে সহাস্যে বললেন, পাপিষ্ঠ, সিংহ যেমন হস্তীকে করে সেইরূপ আমি তোমাকে ভূতলে ফেলে আকর্ষণ করব, তোমার ভগিনী তা দেখবেন; তুমি নিহত হ’লে সৈরিন্ধ্রী অবাধে বিচরণ করবেন, তাঁর স্বামীরাও সুখী হবেন। এই ব’লে ভীম কীচকের কেশ ধরলেন, কীচকও ভীমের দুই বাহু ধরলেন। বালী ও সুগ্রীবের ন্যায় তাঁরা বাহুযুদ্ধে রত হলেন।

 প্রচণ্ড বায়ু যেমন বৃক্ষকে ঘূর্ণিত করে সেইরূপ ভীম কীচককে গৃহ মধ্যে সঞ্চালিত করতে লাগলেন। ভীমের হাত থেকে ঈষৎ মুক্ত হয়ে কীচক জানুর আঘাতে ভীমকে ভূতলে ফেললেন। ভীম তখনই উঠে আবার আক্রমণ করলেন। তাঁর প্রহারে কীচক ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়লেন, ভীম তখন দুই বাহু দ্বারা কীচককে ধ’রে তাঁর কণ্ঠদেশ নিপীড়িত করতে লাগলেন। কীচকের সর্বাঙ্গ ভগ্ন হ’ল। ভীম তাঁকে