পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিরাটপর্ব
২৮৩

॥ গোহরণপর্বাধ্যায়॥

১০। দুর্যোধনাদির মন্ত্রণা

 পাণ্ডবরা কোথায় অজ্ঞাতবাস করছেন তা জানবার জন্য দুর্যোধন নানা দেশে চর পাঠিয়েছিলেন। তারা এখন হস্তিনাপরে ফিরে এসে তাঁকে বললে, মহারাজ, আমরা দুর্গম বনে ও পর্বতে, জনাকীর্ণ দেশে ও নগরে বহু অন্বেষণ ক’রেও পাণ্ডবদের পাই নি। তাঁদের সারথিরা দ্বারকায় গেছে, কিন্তু তাঁরা সেখানে নেই। পাণ্ডবগণ নিশ্চয় বিনষ্ট হয়েছেন। একটি প্রিয় সংবাদ এই—মৎস্যরাজ বিরাটের সেনাপতি দুরাত্মা কীচক যিনি ত্রিগর্ত দেশীয় বীরগণকে বার বার পরাজিত করেছিলেন—তিনি আর জীবিত নেই, অদৃশ্য গন্ধর্বগণ রাত্রিযোগে তাঁকে এবং তাঁর ভ্রাতাদের বধ করেছে।

 দুর্যোধন সভাস্থ সকলকে বললেন, পাণ্ডবদের অজ্ঞাতবাসের আর অল্পকালই অবশিষ্ট আছে, এই কালও যদি তারা অতিক্রম করে তবে তাদের সত্য রক্ষা হবে এবং তার ফল কৌরবদের পক্ষে দুঃখজনক হবে। এখন এর প্রতিকারের জন্য কি করা উচিত তা আপনারা শীঘ্র স্থির করুন। কর্ণ বললেন, আর একদল অতি ধূর্ত গুপ্তচর পাঠাও, তারা সর্বত্র গিয়ে অন্বেষণ করুক। দুঃশাসন বললেন, আমারও সেই মত; পাণ্ডবরা হয়তো নিগূঢ় হয়ে আছে, বা সমুদ্রের অপর পারে গেছে, বা মহারণ্যে হিংস্র পশুগণ তাদের ভক্ষণ করেছে, অথবা অন্য কোনও বিপদের ফলে তারা চিরকালের জন্য বিনষ্ট হয়েছে।

 দ্রোণাচার্য বললেন, পাণ্ডবদের ন্যায় বীর ও বুদ্ধিমান পুরুষরা কখনও বিনষ্ট হন না; আমি মনে করি তাঁরা সাবধানে আসন্নকালের প্রতীক্ষা করছেন। তোমরা বিশেষরূপে চিন্তা করে যা যুক্তিসঙ্গত তাই কর। ভীষ্ম বললেন, দ্রোণাচার্য ঠিক বলেছেন, পাণ্ডবগণ কৃষ্ণের অননুগত, ধর্মবলে ও নিজবীর্যে রক্ষিত, তাঁরা উপযুক্ত কালের প্রতীক্ষা করছেন। তাঁদের অজ্ঞাতবাস সম্বন্ধে অন্য লোকের যে ধারণা, আমার তা নয়। ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির যে দেশেই থাকুন সেই দেশের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল হবে, কোনও গুপ্তচর তাঁর সন্ধান পাবে না। কৃপাচার্য বললেন, পাণ্ডবদের আত্মপ্রকাশের কাল আসন্ন, সময় উত্তীর্ণ হ’লেই তাঁরা নিজ রাজ্য অধিকারের জন্য উৎসাহী হবেন। দুর্যোধন, তুমি নিজের বল ও কোষ বৃদ্ধি কর, তার পর অবস্থা বুঝে সন্ধি বা বিগ্রহের জন্য প্রস্তুত হয়ো।

 ত্রিগর্তদেশের অধিপতি সুশর্মা দুর্যোধনের সভায় উপস্থিত ছিলেন, মৎস্য