পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিরাটপর্ব
২৮৫

নিযুক্ত হলেন। বহক্ষণ যুদ্ধের পর সুশর্মা বিরাটকে পরাজিত করলেন এবং তাঁকে বন্দী ক’রে নিজের রথে তুলে নিয়ে দ্রুতবেগে চললেন। মৎস্যসেনা ভয়ে পালাতে লাগল। তখন যুধিষ্ঠির ভীমকে বললেন, মহাবাহু, তুমি বিরাটকে শত্রুর হাত থেকে মুক্ত কর, আমরা তাঁর গৃহে সুখে সসম্মানে বাস করেছি, তার প্রতিদান আমাদের কর্তব্য। ভীম একটি বিশাল বৃক্ষ উৎপাটন করতে যাচ্ছেন দেখে যুধিষ্ঠির বললেন, তুমি বৃক্ষ নিয়ে যুদ্ধ ক’রো না, লোকে তোমাকে চিনে ফেলবে, তুমি ধনু খড়্‌গ পরশু প্রভৃতি সাধারণ অস্ত্র নাও।

 পাণ্ডবগণ রথ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন দেখে বিরাটের সৈন্যরাও ফিরে এসে যুদ্ধ করতে লাগল। যুধিষ্ঠির ভীম নকুল সহদেব সকলেই বহুশত যোদ্ধাকে বিনষ্ট করলেন। তার পর যুধিষ্ঠির সুশর্মার প্রতি ধাবিত হলেন। ভীম সুশর্মার অশ্ব সারথি ও পৃষ্ঠরক্ষকদের বধ করলেন। বন্দী বিরাট সুশর্মার রথ থেকে লাফিযে নামলেন এবং সুশর্মার গদা কেড়ে নিয়ে তাঁকে আঘাত করলেন। বিরাট বৃদ্ধ হ’লেও গদাহস্তে যুবকের ন্যায় বিচরণ করতে লাগলেন। ভীম সুশর্মার কেশাকর্ষণ ক’রে ভূমিতে ফেলে তাঁর মস্তকে পদাঘাত করলেন, সুশর্মা মূর্ছিত হলেন। ত্রিগর্তসেনা ভয়ে পালাতে লাগল।

 সুশর্মাকে বন্দী ক’রে এবং গরু উদ্ধার করে পাণ্ডবরা বিরাটের কাছে গেলেন। ভীম ভাবলেন, এই পাপী সুশর্মা জীবনলাভের যোগ্য নয়, কিন্তু আমি কি করতে পারি, রাজা যুধিষ্ঠির সর্বদাই দয়াশীল। রথের উপরে অচেতনপ্রায় সুশর্মা বন্ধ হয়ে ছটফট করছেন দেখে যুধিষ্ঠির সহাস্যে বললেন, নরাধমকে মুক্তি দাও। ভীম বললেন, মূঢ়, যদি বাঁচতে চাও তবে সর্বত্র বলবে—আমি বিরাট রাজার দাস। যুধিষ্ঠির বললেন, এ তো দাস হয়েছেই, দুরাত্মাকে এখন ছেড়ে দাও। সুশর্মা, তুমি অদাস হয়ে চলে যাও, এমন কার্য আর ক’রো না। সুশর্মা লজ্জায় অধোমুখ হয়ে নমস্কার ক’রে চলে গেলেন।

 পাণ্ডবগণ যুদ্ধস্থানের নিকটেই সেই রাত্রি যাপন করলেন। পরদিন বিরাট তাঁদের বললেন, বিজয়িগণ, আপনাদের আমি সালংকারা কন্যা, বহু ধন এবং আর যা চান তা দিচ্ছি, আপনাদের বিক্রমেই আমি মুক্ত হয়ে নিরাপদে আছি, আপনারাই এখন মৎস্যরাজ্যের অধীশ্বর। যুধিষ্ঠিরাদি কৃতাঞ্জলি হয়ে বললেন, মহারাজ, আপনার বাক্যে আমরা আনন্দিত হয়েছি, আপনি যে মুক্তিলাভ করেছেন তাতেই আমরা সন্তুষ্ট। বিরাট পুনর্বার যুধিষ্ঠিরকে বললেন, আপনি আসুন, আপনাকে রাজপদে অভিষিক্ত করব। হে বৈয়াঘ্রপদ্য-গোত্রীয় ব্রাহ্মণ, আপনার জন্যই আমার