পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব

ক’রে আমি খেতে পারি না। অশ্বিদ্বয় বললেন, তোমার উপাধ্যায়ও পূর্বে আমাদের স্তব ক’রে পূপ পেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তা গুরুকে নিবেদন না ক’রেই খেয়েছিলেন। উপমন্যূ বললেন, আমি আপনাদের নিকট অনুনয় করছি, গুরুকে নিবেদন না করে আমি খেতে পারব না। অশ্বিদ্বয় বললেন, তোমার গুরুভক্তিতে আমরা প্রীত হয়েছি; তোমার উপাধ্যায়ের দন্ত কৃষ্ণ লৌহময় হবে, তোমার দন্ত হিরণ্ময় হবে, তুমি চক্ষুষ্মান হবে এবং শ্রেয়োলাভ করবে। উপমন্য চক্ষ, লাভ ক’রে গুরুর কাছে এলেন এবং অভিবাদন ক’রে সকল বৃত্তান্ত জানালেন। গুরু প্রীত হয়ে বললেন, অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের বরে তোমার মঙ্গল হবে, সকল বেদ এবং ধর্মশাস্ত্রও তুমি আয়ত্ত করবে। উপমন্যুর পরীক্ষা এইরূপে শেষ হ’ল।

 আয়োদ ধৌম্য তাঁর তৃতীয় শিষ্য বেদকে আদেশ দিলেন, তুমি আমার গৃহে কিছুকাল বাস ক’রে আমার সেবা কর, তোমার মঙ্গল হবে। বেদ দীর্ঘকাল গুরু গৃহে থেকে তাঁর আজ্ঞায় বলদের ন্যায় ভারবহন এবং শীত গ্রীষ্ম ক্ষুধা তৃষ্ণাদি কষ্ট সইতে লাগলেন। অবশেষে তিনি গরুকে পরিতুষ্ট ক’রে শ্রেয় ও সর্বজ্ঞতা লাভ করলেন। এইরূপে তাঁর পরীক্ষা শেষ হ’ল৷

৩। উতঙ্ক, পৌষ্য ও তক্ষক

 উপাধ্যায়ের আজ্ঞা নিয়ে বেদ গৃহস্থাশ্রমে প্রবেশ করলেন, তাঁরও তিনটি শিষ্য হ’ল। তিনি শিষ্যদের বলতেন না যে এই কর্ম কর, বা আমার শুশ্রূষা কর। গুরুগৃহবাসের দুঃখ তিনি জানতেন সেজন্য শিষ্যদের কষ্ট দিতে চাইতেন না। কিছুকাল পরে জনমেজয় এবং পৌষ্য নামে আর এক রাজা বেদকে উপাধ্যায়ের পদে বরণ করলেন। একদা বেদ যাজন কার্যের জন্য বিদেশে যাবার সময় উতঙ্ক[১] নামক শিষ্যকে ব’লে গেলেন, আমার প্রবাসকালে গৃহে যে বিষয়ের অভাব হবে তুমি তা পূরণ করবে। উতঙ্ক গুরুগৃহে থেকে সকল কর্তব্য পালন করতে লাগলেন। একদিন আশ্রমের নারীরা তাঁকে বললে, তোমার উপাধ্যায়ানী ঋতুমতী হয়েছেন কিন্তু উপাধ্যায় এখানে নেই; ঋতু যাতে নিষ্ফল না হয় তুমি তা কর। উতঙ্ক উত্তর দিলেন, আমি স্ত্রীলোকের কথায় এমন অকার্য করতে পারি না, উপাধ্যায় আমাকে অকার্য করবার আদেশ দেন নি। কিছুকাল পরে বেদ ফিরে এলেন এবং সকল বৃত্তান্ত শানে প্রীত হয়ে বললেন, বৎস উতঙ্ক, আমি তোমার কি প্রিয়সাধন করব বল। তুমি


  1. আশ্বমেধিকপর্বে ৬-পরিচ্ছেদে উতঙ্কের উপাখ্যান কিছু, অন্যপ্রকার।