পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিরাটপর্ব
২৯৫

অশ্বসকল বধ ক’রে তাঁর পার্শ্বদেশ দশ বাণে বিদ্ধ করলেন। দুর্যোধন সংজ্ঞালাভ ক’রে বললেন, পিতামহ, অর্জুনকে অস্ত্রাঘাত করুন, যেন ও চ’লে যেতে না পারে। ভীষ্ম হেসে বললেন, তোমার বুদ্ধি আর বিক্রম এতক্ষণ কোথায় ছিল? তুমি যখন ধনবাণ ত্যাগ ক’রে নিস্পন্দ হয়ে পড়ে ছিলে তখন অর্জুন কোনও নৃশংস কর্ম করেন নি, তিনি ত্রিলোকের রাজ্যের জন্যও স্বধর্ম ত্যাগ করেন না, তাই তোমরা সকলে এই যুদ্ধে নিহত হও নি। এখন তুমি নিজের দেশে ফিরে যাও, অর্জুনও গরু নিয়ে প্রস্থান করুন। দুর্যোধন দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে যুদ্ধের ইচ্ছা ত্যাগ ক’রে নীরব হলেন, অন্যান্য সকলেই ভীষ্মের বাক্য অনুমোদন করে দুর্যোধনকে নিয়ে ফিরে যাবার ইচ্ছা করলেন।

 কুরুবীরগণ চ’লে যাচ্ছেন দেখে অর্জুন প্রীত হলেন এবং গুরুজনদের মিষ্টবাক্যে সম্মান জানিয়ে কিছুদূর অনুগমন করলেন। তিনি পিতামহ ভীষ্ম ও দ্রোণাচার্যকে আনতমস্তকে প্রণাম জানালেন, অশ্বত্থামা কৃপ ও মান্য কৌরবগণকে বিচিত্র বাণ দিয়ে অভিবাদন করলেন, এবং শরাঘাতে দুর্যোধনের রত্নভূষিত মুকুট ছেদন করলেন। তার পর অর্জুন উত্তরকে বললেন, রথের অশ্ব ঘুরিয়ে নাও, তোমার গোধনের উদ্ধার হয়েছে, এখন আনন্দে রাজধানীতে ফিরে চল।

১৫। অর্জুন ও উত্তরের প্রত্যাবর্তন — বিরাটের পুত্রগর্ব

 যেসকল কৌরবসৈন্য পালিয়ে গিয়ে বনে লুকিয়েছিল তারা ক্ষুধাতৃষ্ণায় কাতর হ’য়ে কম্পিতদেহে অর্জুনকে প্রণাম করে বললে, পার্থ, আমরা এখন কি করব? অর্জুন তাদের আশ্বাস দিয়ে বললেন, তোমাদের মঙ্গল হ’ক. তোমরা নির্ভয়ে প্রস্থান কর। তারা অর্জুনের আয়ু কীর্তি ও যশ বৃদ্ধির আশীর্বাদ করে চ’লে গেল।

 অর্জুন উত্তরকে বললেন, বৎস, তুমি রাজধানীতে গিয়ে তোমার পিতার নিকট এখন আমাদের পরিচয় দিও না, তা হ’লে তিনি ভয়ে প্রাণত্যাগ করবেন। তুমি নিজেই যুদ্ধ ক’রে কৌরবদের পরাস্ত করেছ এবং গোধন উদ্ধার করেছ এই কথা ব’লো। উত্তর বললেন, সব্যসাচী, আপনি যা করেছেন তা আর কেউ পারে না, আমার তো সে শক্তি নেইই। তথাপি আপনি আদেশ না দিলে আমি পিতাকে প্রকৃত ঘটনা জানাব না।

 অর্জুন বিক্ষতদেহে শ্মশানে শমীবৃক্ষের নিকটে এলেন। তখন তাঁর