পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

উদ্‌যোগপর্ব

॥ সেনোদ্‌যোগপর্বাধ্যায়॥

১। রাজ্যোদ্ধারের মন্ত্রণা

 অভিমন্যু-উত্তরার বিবাহের পর রাত্রিতে বিশ্রাম ক’রে পাণ্ডবগণ প্রভাতকালে বিরাট রাজার সভায়[১] এলেন। এই সভায় বিরাট দ্রুপদ বসুদেব বলরাম কৃষ্ণ সাত্যকি প্রদ্যুম্ন শাম্ব বিরাটপুত্রগণ অভিমন্যু এবং দ্রৌপদীর পঞ্চ পুত্র উপস্থিত ছিলেন। কিছুক্ষণ নানাপ্রকার আলাপের পর সকলে কৃষ্ণের প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন।

 কৃষ্ণ বললেন, আপনারা জানেন, শকুনি দ্যূতক্রীড়ায় শঠতার দ্বার যুধিষ্ঠিরকে জয় ক’রে রাজ্য হরণ করেছিলেন। পাণ্ডবগণ বহু কষ্ট ভোগ ক’রে তাঁদের প্রতিজ্ঞা পালন করেছেন, তাঁদের বার বৎসর বনবাস এবং এক বৎসর অজ্ঞাতবাস সমাপ্ত হয়েছে। এখন যা যুধিষ্ঠির ও দুর্যোধন দুজনেরই হিতকর এবং কৌরব ও পাণ্ডব উভয়ের পক্ষে ধর্মসম্মত যুক্তিসিদ্ধ ও যশস্কর, তা আপনারা ভেবে দেখুন। যুধিষ্ঠির ধর্মবিরুদ্ধ উপায়ে সুররাজ্যও চান না, বরং তিনি ধর্ম সম্মত উপায়ে একটিমাত্র গ্রামের স্বামিত্বই বাঞ্ছনীয় মনে করেন। দুর্যোধনাদি প্রতারণা ক’রে পাণ্ডবগণের পৈতৃক রাজ্য হরণ করেছেন, তথাপি যুধিষ্ঠির তাঁদের শুভ কামনা করেন। এঁরা সত্যপরায়ণ, নিজেদের প্রতিজ্ঞা পালন করেছেন, এখন যদি ন্যায্য ব্যবহার না পান তবে ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণকে বধ করবেন। যদি আপনারা মনে করেন যে পাণ্ডবগণ সংখ্যায় অল্প সেজন্য জয়লাভে সমর্থ হবেন না, তবে আপনারা মিলিত হয়ে এমন চেষ্টা করুন যাতে এঁদের শত্রুরা বিনষ্ট হয়। কিন্তু আমরা এখনও জানি না দুর্যোধনের অভিপ্রায় কি, তা না জেনেই আমরা কর্তব্য স্থির করতে পারি না। অতএব কোনও ধার্মিক সৎস্বভাব সদ্‌বংশীর সতর্ক দূতকে পাঠানো হ’ক, যাঁর কথায় দুর্যোধন প্রশমিত হয়ে যুধিষ্ঠিরকে অর্ধরাজ্য দিতে সম্মত হবেন।

 বলরাম বললেন, কৃষ্ণের বাক্য যুধিষ্ঠির ও দুর্যোধন উভয়েরই হিতকর।

  1. উপপ্লব্যনগরস্থ বিরাটরাজসভায়।