পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারত

ধর্মানুসারে আমার সেবা করেছ, আমাদের পরস্পরের প্রীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। তোমার সকল কামনা পূর্ণ হবে। এখন তুমি স্বগৃহে যেতে পার।

 উতঙ্ক বললেন, আমিই বা আপনার কি প্রিয়সাধন করব বলুন, আমি আপনার অভীষ্ট দক্ষিণা দিতে ইচ্ছা করি। বেদ বললেন, বৎস, এখন থাকুক না। কিছুকাল পরে উতঙ্ক পুনর্বার গুরুকে দক্ষিণার কথা জিজ্ঞাসা করলেন। বেদ বললেন, তুমি বহুবার আমাকে দক্ষিণার কথা বলেছ; গৃহমধ্যে গিয়ে উপাধ্যায়ানীকে জিজ্ঞাসা কর কি দিতে হবে। তখন উতঙ্ক গুরুপত্নীর কাছে গিয়ে বললেন, ভগবতী, উপাধ্যায় আমাকে গৃহগমনের অনুমতি দিয়েছেন, আমি গুরুদক্ষিণা দিয়ে ঋণমুক্ত হ’তে চাই, আপনি বলুন কি দক্ষিণা দেব। উপাধ্যায়পত্নী বললেন, তুমি রাজা পৌষ্যের কাছে যাও, তাঁর ক্ষত্রিয়া পত্নী যে দুই কুণ্ডল পরেন তাই চেয়ে আন। চার দিন পরে পুণ্যক ব্রত হবে, তাতে আমি ওই কুণ্ডলে শোভিত হয়ে ব্রাহ্মণদের পরিবেশন করতে ইচ্ছা করি। তুমি আমার এই অভীষ্ট পূর্ণ কর, তাতে তোমার মঙ্গল হবে, কিন্তু যদি না কর তবে অনিষ্ট হবে।

 উতঙ্ক কুণ্ডল আনবার জন্য যাত্রা করলেন। পথে যেতে যেতে তিনি প্রকাণ্ড বৃষে আরূঢ় এক মহাকায় পুরুষকে দেখতে পেলেন। সেই পুরুষ বললেন, উতঙ্ক, তুমি এই বৃষের পুরীষ ভক্ষণ কর। উতঙ্ককে অনিচ্ছুক দেখে তিনি আবার বললেন, উতঙ্ক, খাও, বিচার ক’রো না, তোমার উপাধ্যায়ও পূর্বে খেয়েছেন। তখন উতঙ্ক বৃষের মলমূত্র খেলেন এবং দাঁড়িয়ে উঠে সত্বর আচমন ক’রে পৌষ্যের নিকট যাত্রা করলেন। পৌষ্য তাঁকে বললেন, ভগবান, কি আজ্ঞা বলুন। উতঙ্ক কুণ্ডল প্রার্থনা করলে রাজা বললেন, আপনি অন্তঃপুরে গিয়ে মহিষীর কাছে চেয়ে নিন। উতঙ্ক মহিষীকে দেখতে না পেয়ে ফিরে এসে পৌষ্যকে বললেন, আমাকে মিথ্যা কথা বলা আপনার উচিত হয় নি, অন্তঃপুরে মহিষী নেই। পৌষ্য ক্ষণকাল চিন্তা করে বললেন, নিশ্চয় আপনি উচ্ছিষ্ট (এঁটো মুখে) আছেন, অশুচি ব্যক্তি আমার পতিব্রতা ভার্যাকে দেখতে পায় না। উতঙ্ক স্মরণ ক’রে বললেন, আমি এখানে শীঘ্র আসবার জন্য দাঁড়িয়ে আচমন করেছিলাম সেজন্য এই দোষ হয়েছে। উতঙ্ক তখন পূর্বমুখে ব’সে হাত পা মুখ ধুলেন এবং তিনবার নিঃশব্দে ফেনশূন্য অনুষ্ণ হৃদ্য জল পান ক’রে দুবার মুখাদি ইন্দ্রিয় মুছলেন। তারপর তিনি অন্তঃপুরে গিয়ে মহিষীকে দেখতে পেলেন। উতঙ্কের প্রার্থনা শুনে মহিষী প্রীত হয়ে তাঁকে কুণ্ডল দিলেন এবং বললেন, নাগরাজ তক্ষক এই কুণ্ডল দুটির প্রার্থী, অতএব সাবধানে নিয়ে যাবেন।