পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৪
মহাভারত

অতএব পাণ্ডবগণের হিতের নিমিত্ত আপনি পুষ্যা নক্ষত্রের যোগে জয়সূচক শুভ মুহূর্তে সত্বর যাত্রা করুন। দ্রুপদ কর্তৃক এইরূপে উপদিষ্ট হয়ে পুরোহিত তাঁর শিষ্যদের নিয়ে হস্তিনাপুরে যাত্রা করলেন।

২। কৃষ্ণ-সকাশে দুর্যোধন ও অর্জুন ― বলরাম ও দুর্যোধন

 অন্যান্য দেশে দূত পাঠাবার পর অর্জুন স্বয়ং দ্বারকায় যাত্রা করলেন। পাণ্ডবগণ কি করছেন তার সমস্ত সংবাদ দুর্যোধন তাঁর গুপ্তচরদের কাছে পেতেন। কৃষ্ণ-বলরাম প্রভৃতি স্বভবনে ফিরে গেছেন শুনে দুর্যোধন অল্প সৈন্য নিয়ে অশ্বারোহণে দ্রুতবেগে দ্বারকায় এলেন। অর্জুনও সেই দিন সেখানে উপস্থিত হলেন। কৃষ্ণ নিদ্রিত আছেন জেনে দুর্যোধন ও অর্জুন তাঁর শয়নকক্ষে গেলেন। প্রথমে দুর্যোধন এসে কৃষ্ণের মস্তকের নিকটে একটি উৎকৃষ্ট আসনে বসলেন, তার পর অর্জুন এসে কৃষ্ণের পাদদেশে বিনীতভাবে কৃতাঞ্জলি হয়ে রইলেন।

 জাগরিত হয়ে কৃষ্ণ প্রথমে অর্জুনকে দেখলেন, তার পর পিছন দিকে দৃষ্টিপাত ক’রে সিংহাসনে উপবিষ্ট দুর্যোধনকে দেখলেন। তিনি স্বাগত সম্ভাষণ ক’রে দুজনের আগমনের কারণ জিজ্ঞাসা করলে দুর্যোধন সহাস্যে বললেন, মাধব, আসন্ন যুদ্ধে তুমি আমার সহায় হও। আমার আর অর্জুনের সঙ্গে তোমার সমান সখ্য, সমান সম্বন্ধ[১]। আমি আগে তোমার কাছে এসেছি, সাধুজন প্রথমাগতকেই বরণ করেন, তুমি সজ্জনশ্রেষ্ঠ, অতএব সদাচার রক্ষা কর।

 কৃষ্ণ বললেন, রাজা, তুমি প্রথমে এসেছ তাতে আমার সন্দেহ নেই, কিন্তু আমি ধনঞ্জয়কেই প্রথমে দেখেছি, অতএব দুজনকেই সাহায্য করব। যারা বয়ঃকনিষ্ঠ তাদের অভীষ্টপুরণ আগে করা উচিত, সেজন্য প্রথমে অর্জুনকে বলছি।— নারায়ণ নামে খ্যাত আমার দশ কোটি গোপ যোদ্ধা আছে, তাদের দৈহিক বল আমারই তুল্য। পার্থ, তুমি সেই দুর্ধর্ষ নারায়ণী সেনা চাও, না যুদ্ধবিমুখ নিরস্ত্র আমাকে চাও? তুমি বার বার ভেবে দেখ— যুদ্ধে সাহায্যের জন্য দশ কোটি যোদ্ধা নেবে, কিংবা কেবল সচিবরূপে আমাকে নেবে?

 কৃষ্ণ যুদ্ধ করবেন না জেনেও অর্জুন তাঁকেই বরণ করলেন। দুর্যোধন

  1. কৃষ্ণ অর্জুনের মামাতো ভাই, কৃষ্ণভগিনী সুভদ্রা অর্জুনের পত্নী; কৃষ্ণপুত্র শাম্ব দুর্যোধনের জামাতা।