পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উদ্‌যোগপর্ব
৩০৭

৪। ত্রিশিরা, বৃত্র, ইন্দ্র, নহুষ ও অগস্ত্য

 যুধিষ্ঠির প্রশ্ন করলেন, মহারাজ, ইন্দ্র ও তাঁর ভার্যা কি প্রকারে দুঃখভোগ করেছিলেন? শল্য এই উপাখ্যান বললেন।—

 ত্বষ্টা নামে এক প্রজাপতি ছিলেন, তিনি ইন্দ্রের প্রতি বিদ্বেষযুক্ত হয়ে ত্রিশিরা নামক এক পুত্রের জন্ম দিলেন। ত্রিশিরার তিন মুখ সূর্য চন্দ্র ও অগ্নির ন্যায়; তিনি এক মুখে বেদাধ্যয়ন, আর এক মুখে সুরাপান এবং তৃতীয় মুখে যেন সর্বদিক গ্রাস ক’রে নিরীক্ষণ করতেন। ইন্দ্রত্বলাভের জন্য ত্রিশিরা কঠোর তপস্যায় রত হলেন। তাঁর তপোভঙ্গের জন্য ইন্দ্র বহু অপ্সরা পাঠালেন, কিন্তু ত্রিশিরা বিচলিত হলেন না, তখন তাঁকে মারবার জন্য ইন্দ্র বজ্র নিক্ষেপ করলেন। ত্রিশিরা নিহত হলেন, কিন্তু তাঁর মস্তক জীবিতের ন্যায় রইল। ইন্দ্র ভীত হয়ে একজন বর্ধকী (ছুতোর)কে বললেন, তুমি কুঠার দিয়ে এর মস্তক ছেদন কর। বর্ধকী বললে, এর স্কন্ধ অতি বৃহৎ, আমার কুঠারে কাটা যাবে না, এমন বিগর্হিত কর্মও আমি পারব না। কে আপনি? এই ঋষিপুত্রকে হত্যা করে আপনার ব্রহ্মহত্যার ভয় হচ্ছে না? ইন্দ্র বললেন, আমি দেবরাজ, এই মহাবল পুরুষ আমার শত্রু, সেজন্য বজ্রাঘাতে একে বধ করেছি, পরে আমি কঠোর প্রায়শ্চিত্ত করব। বর্ধকী, তুমি শীঘ্র এর শিরশ্ছেদ কর, আমি তোমার প্রতি অনুগ্রহ করব; লোকে যখন যজ্ঞ করবে তখন নিহত পশুর মুণ্ড তোমাকে দেবে। বর্ধকী সম্মত হয়ে ত্রিশিরার তিন মুণ্ড কেটে ফেললে। প্রথম মুণ্ডের মুখ থেকে চাতক পক্ষীর দল, দ্বিতীয় মুখ থেকে চটক ও শোন, এবং তৃতীয় মুখ থেকে তিত্তির পক্ষীর দল নির্গত হ’ল। ইন্দ্র হৃষ্ট হয়ে স্বগৃহে চ’লে গেলেন।

 পুত্রের নিধনসংবাদ পেয়ে ত্বষ্টা অত্যন্ত রুদ্ধ হলেন এবং ইন্দ্রের বিনাশের নিমিত্ত অগ্নিতে আহুতি দিয়ে বৃত্রাসুরকে সৃষ্টি করলেন। ত্বষ্টার আজ্ঞায় বৃত্র স্বর্গে গিয়ে ইন্দ্রকে গ্রাস করলেন। দেবতারা উদ্‌বিগ্ন হয়ে জৃম্ভিকা (হাই) সৃষ্টি করলেন, তার প্রভাবে বৃত্র মুখব্যাদান করলেন, ইন্দ্রও দেহ সংকুচিত ক’রে বেরিয়ে এলেন। তার পর ইন্দ্র বৃত্রের সঙ্গে বহুকাল যুদ্ধ করলেন, কিন্তু তাকে দমন করতে না পেরে বিষ্ণুর শরণাপন্ন হলেন। বিষ্ণু বললেন, দেবতা ঋষি ও গন্ধর্বদের নিয়ে তুমি বৃত্রের কাছে যাও, তার সঙ্গে সন্ধি কর। এই উপায়েই তুমি জয়লাভ করবে। আমি অদৃশ্যভাবে তোমার সঙ্গে অধিষ্ঠান করব।

 ঋষিরা বৃত্রের কাছে গিয়ে বললেন, তুমি দুর্জয় বীর, তোমার তেজে জগৎ