পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
'উদ্‌যোগপর্ব
৩০৯

পত্নী অহল্যাকে ধর্ষণ করেছিলেন এবং আরও অনেক ধর্মবিরুদ্ধ নৃশংস ও শঠতাময় কার্য করেছিলেন তখন আপনারা বারণ করেন নি কেন? শচী আমার সেবা করুন, তাতে তাঁর ও আপনাদের মঙ্গল হবে। দেবতারা বৃহস্পতির কাছে গিয়ে বললেন, আপনি ইন্দ্রাণীকে নহুষের হস্তে সমর্পণ করুন, তিনি ইন্দ্র অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, বরবর্ণিনী শচী তাঁকেই এখন পতিত্বে বরণ করুন। শচী কাতর হয়ে কাঁদতে লাগলেন। বৃহস্পতি বললেন, ইন্দ্রাণী, আমি শরণাগতকে ত্যাগ করি না, তুমি নিশ্চিন্ত থাক। দেবগণ, তোমরা চ’লে যাও।

 দেবতারা বললেন, কি করলে সকলের পক্ষে ভাল হয় আপনি বলুন। বৃহস্পতি বললেন, ইন্দ্রাণী নহুষের কাছে কিছুকাল অবকাশ প্রার্থনা করুন, তাতে সকলের শুভ হবে। কালক্রমে বহু বিঘ্ন ঘটে, নহুষ বলশালী ও দর্পিত হ’লেও কালই তাঁকে কালসদনে পাঠাবে। শচী নহুষের কাছে গেলেন এবং কম্পিতদেহে কৃতাঞ্জলি হ’য়ে বললেন, সুরেশ্বর, আমাকে কিছুকাল অবকাশ দিন। ইন্দ্র কোথায় কি অবস্থায় আছেন আমি জানি না; অনুসন্ধান ক’রেও যদি তাঁর সংবাদ না পাই তবে নিশ্চয় আপনার সেবা করব। নহুষ সম্মত হলেন, শচীও বৃহস্পতির কাছে ফিরে গেলেন।

 তার পর দেবতারা বিষ্ণুর কাছে গিয়ে বললেন, আপনার বীর্যেই বৃত্র নিহত হয়েছে এবং তার ফলে ইন্দ্র ব্রহ্মহত্যার পাপে পড়েছেন। এখন তাঁর মুক্তির উপায় বলুন। বিষ্ণু বললেন, ইন্দ্র অশ্বমেধ যজ্ঞে আমার পূজা করুন, তাতে তিনি পাপমুক্ত হ’য়ে দেবরাজত্ব ফিরে পাবেন, দুর্মতি নহুষও বিনষ্ট হবে। দেবগণ ও বৃহস্পতি প্রভৃতি ঋষিগণ ইন্দ্রের কাছে গিয়ে অশ্বমেধ যজ্ঞ করলেন এবং তার ফলে ইন্দ্র ব্রহ্মহত্যার পাপ থেকে মুক্ত হলেন। তাঁর পাপ বিভক্ত হ’য়ে বৃক্ষ নদী পর্বত ভূমি স্ত্রী ও প্রাণিগণে সংক্রামিত হ’ল।

 দেবরাজপদে নহুষকে দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত দেখে ইন্দ্র পুনর্বার আত্মগোপন ক’রে কালপ্রতীক্ষা করতে লাগলেন। শোকার্তা শচী তখন উপশ্রুতি নাম্নী রাত্রিদেবীর উপাসনা করলেন। উপশ্রুতি মূর্তিমতী হ’য়ে দর্শন দিলেন এবং শচীকে সঙ্গে নিয়ে সমুদ্রমধ্যে এক মহাদ্বীপে উপস্থিত হলেন। সেই দ্বীপের মধ্যে শত যোজন বিস্তীর্ণ সরোবরে উন্নত বৃন্তের উপরে একটি শ্বেতবর্ণ বৃহৎ পদ্ম ছিল। উপশ্রুতির সঙ্গে শচী সেই পদ্মের নাল ভেদ ক’রে ভিতরে গিয়ে দেখলেন, মৃণালসূত্রের মধ্যে ইন্দ্র অতি সূক্ষ্মরূপে অবস্থান করছেন। শচী তাঁকে বললেন, প্রভু, তুমি যদি আমাকে রক্ষা না কর, তবে নহুষ আমাকে বশে আনবে। তুমি স্বমূর্তিতে