পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব

 উতঙ্ক সন্তুষ্ট হয়ে পৌষ্যের কাছে এলেন। পৌষ্য বললেন, ভগবান, সৎপাত্র সহজে পাওয়া যায় না, আপনি গুণবান অতিথি, আপনার সৎকার করতে ইচ্ছা করি। উতঙ্ক বললেন, গৃহে যে অন্ন আছে তাই শীঘ্র নিয়ে আসুন। অন্ন আনা হ’লে উতঙ্ক দেখলেন তা ঠাণ্ডা এবং তাতে চুল রয়েছে। তিনি বললেন, আমাকে অশুচি অন্ন দিয়েছেন অতএব আপনি অন্ধ হবেন। পৌষ্য বললেন, আপনি নির্দোষ অন্নের দোষ দিচ্ছেন এজন্য আপনি নিঃসন্তান হবেন। উতঙ্ক বললেন, অশুচি অন্ন দিয়ে আবার অভিশাপ দেওয়া আপনার অনুচিত, দেখুন না অন্ন অশুচি কি না। রাজা অন্ন দেখে অনুমান করলেন এই শীতল অন্ন কোনও মুক্তকেশী স্ত্রী এনেছে, তারই কেশ এতে পড়েছে। তিনি ক্ষমা চাইলে উতঙ্ক বললেন, আমার বাক্য মিথ্যা হয় না, আপনি অন্ধ হবেন, কিন্তু শীঘ্রই আবার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন। আমাকে যে শাপ দিয়েছেন তাও যেন না ফলে। রাজা বললেন, আমার ক্রোধ এখনও শান্ত হয়নি, ব্রাহ্মণের হৃদয় নবনীততুল্য কিন্তু বাক্যে তীক্ষ্ণধার ক্ষুর থাকে, ক্ষত্রিয়ের এর বিপরীত। আমি শাপ প্রত্যাহার করতে পারি না, আপনি চ’লে যান। উতঙ্ক বললেন, আপনি অন্নের দোষ স্বীকার করেছেন অতএব আপনার শাপ ফলবে না। এই ব’লে তিনি কুণ্ডল নিয়ে চলে গেলেন।

 উতঙ্ক যেতে যেতে পথে এক নগ্ন ক্ষপণক[১] দেখতে পেলেন, সে মাঝে মাঝে অদৃশ্য হচ্ছে। তিনি কুণ্ডল দুটি ভূমিতে রেখে স্নানাদির জন্য জলাশয়ে গেলেন, সেই অবসরে ক্ষপণক কুণ্ডল নিয়ে পালিয়ে গেল। স্নান শেষ ক’রে উতঙ্ক দৌড়ে গিয়ে ক্ষপণককে ধ’রে ফেললেন। সে তখনই তক্ষকের রূপ ধারণ করলে এবং সহসা আবির্ভূত এক গর্তে প্রবেশ ক’রে নাগলোকে চলে গেল। উতঙ্ক সেই গর্ত দণ্ডকাণ্ঠ (ব্রহচারীর যষ্টি) দিয়ে খুঁড়ে বড় করবার চেষ্টা করলেন। তাঁকে ক্লান্ত ও অকৃতকার্য দেখে ইন্দ্র তাঁর বজ্রকে বললেন, যাও, ওই ব্রাহ্মণকে সাহায্য কর। বজ্র দণ্ডকাষ্ঠে অধিষ্ঠান ক’রে গর্তটি বড় ক’রে দিলে। উতঙ্ক সেই গর্ত দিয়ে নাগলোকে গেলেন এবং নানাবিধ প্রাসাদ হর্ম্য ক্রীড়াস্থানাদি দেখতে পেলেন। কুণ্ডল ফিরে পাবার জন্য তিনি নাগগণের স্তব করতে লাগলেন। তার পর দেখলেন, দুই স্ত্রী তাঁতে কাপড় বুনছে, তার কতক সুতো কাল কতক সাদা; ছয় কুমার দ্বাদশ অর (পাখি) যুক্ত একটি চক্র ঘোরাচ্ছে; একজন সুদর্শন পুরুষ এবং একটি

  1. দিগম্বর সন্ন্যাসী বিশেষ।