পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উদ্‌যোগপৰ্ব
৩১৩

 পুরোহিতের কথা শুনে ভীষ্ম বললেন, ভাগ্যক্রমে পাণ্ডবগণ ও কৃষ্ণ কুশলে আছেন এবং ধর্মপথে থেকে সন্ধিকামনা করছেন। আপনি যা বলেছেন সবই সত্য, তবে আপনি ব্রাহ্মণ সেজন্য আপনার বাক্য অতিরিক্ত তীক্ষ্ণ। পাণ্ডবদের বহু কষ্ট দেওয়া হয়েছে এবং ধর্মানুসারে তাঁরা পিতৃধনের অধিকারী এ বিষয়ে কোনও সংশয় নেই। অজুর্ন অস্ত্রবিদ্যায় সুশিক্ষিত মহারথ, স্বয়ং ইন্দ্রও যুদ্ধে তাঁর সমকক্ষ নন।

 কর্ণ ক্রুদ্ধ হয়ে বাধা দিয়ে দ্রুপদের পুরোহিতকে বললেন, ব্রাহ্মণ, যা হয়ে গেছে তা সকলেই জানে, বার বার সে কথা বলে লাভ কি? দুর্যোধনের জন্যই শকুনি দ্যূতক্রীড়ায় যুধিষ্ঠিরকে জয় করেছিলেন এবং যুধিষ্ঠির পণরক্ষার জন্য বনে গিয়েছিলেন। প্রতিজ্ঞানুযায়ী সময়ের মধ্যে[১] তিনি মূর্খের ন্যায় রাজ্য চাইতে পারেন না। দুর্যোধন ধর্মানুসারে শত্রুকে সমস্ত পৃথিবী দান করতে পারেন, কিন্তু ভয় পেয়ে পাদপরিমিত ভূমিও দেবেন না। পাণ্ডবরা যদি পৈতৃক রাজ্য চান তবে অবশিষ্ট কাল বনবাসে কাটিয়ে প্রতিজ্ঞা রক্ষা করুন, তার পর নির্ভয়ে দুর্যোধনের ক্রোড়ে আশ্রয় নিন।

 ভীষ্ম বললেন, রাধেয়, অহংকার ক’রে লাভ কি, অর্জুন একাকী ছ জন রথীকে জয়[২] করেছিলেন তা স্মরণ কর। এই ব্রাহ্মণ যা বললেন তা যদি আমরা না করি তবে অর্জুন কর্তৃক নিহত হয়ে আমরা রণভূমিতে ধূলিভক্ষণ করব।

 কর্ণকে ভৎসনা ক’রে ধৃতরাষ্ট্র বললেন, শান্তনুপুত্র ভীষ্ম যা বলেছেন তা সকলের পক্ষে হিতকর। ব্রাহ্মণ, আমি চিন্তা ক’রে পাণ্ডবগণের নিকট সঞ্জয়কে পাঠাব, আপনি আজই অবিলম্বে ফিরে যান। তার পর ধৃতরাষ্ট্র দ্রুপদপুরোহিতকে সসম্মানে বিদায় দিলেন।

৭। সঞ্জয়ের দৌত্য

 ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়কে বললেন, তুমি উপপ্লব্য নগরে গিয়ে পাণ্ডবগণের সংবাদ নেবে এবং অজাতশত্রু যুধিষ্ঠিরকে অভিনন্দন ক’রে বলবে, ভাগ্যক্রমে তুমি বনবাস


  1. কর্ণ বলতে চান যে, অজ্ঞাতবাসের কাল উত্তীর্ণ হবার আগেই পাণ্ডবগণ আত্মপ্রকাশ করেছেন সেজন্য তাঁদের আবার বার বৎসর বনবাসে থাকতে হবে।
  2. গোহরণকালে।