পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারত

অশ্বও সেখানে রয়েছে। উতঙ্ক এই সকলেরও স্তব করলেন। সেই পুরুষ উতঙ্ককে বললেন, তোমার স্তবে প্রীত হয়েছি, কি অভীষ্ট সাধন করব বল। উতঙ্ক বললেন, নাগগণ আমার বশীভূত হ’ক। পুরুষ বললেন, তুমি এই অশ্বের গুহ্যদেশে ফুৎকার দাও। উতঙ্ক ফুৎকার দিলে অশ্বের সমস্ত ইন্দ্রিয়দ্বার থেকে সধূম অগ্নিশিখা নির্গত হয়ে নাগলোকে ব্যাপ্ত হ’ল। তখন ভীত হয়ে তক্ষক তাঁর বাসভবন থেকে বেরিয়ে এসে বললেন, এই নিন আপনার কুণ্ডল। কুণ্ডল পেয়ে উতঙ্ক ভাবলেন, আজ উপাধ্যায়ানীর পুণ্যক ব্রত, আমি বহু দূরে এসে পড়েছি, কি ক’রে তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ করব? সেই পুরুষ তাঁকে বললেন, তুমি এই অশ্বে আরূঢ় হয়ে যাও, ক্ষণমধ্যে তোমার উপাধ্যায়ের গৃহে পৌঁছবে।

 উপাধ্যায়ানী স্নান করে কেশসংস্কার করছিলেন এবং উতঙ্ক এলেন না দেখে তাঁকে শাপ দেবার উপক্রম করছিলেন, এমন সময় উতঙ্ক এসে প্রণাম ক’রে কুণ্ডল দিলেন। তার পর তিনি উপাধ্যায়ের কাছে গিয়ে সকল বৃত্তান্ত জানালেন। উপাধ্যায় বললেন, তুমি যে দুই স্ত্রীকে বস্ত্র বয়ন করতে দেখেছ তাঁরা ধাতা ও বিধাতা, কৃষ্ণ ও শ্বেত সূত্র রাত্রি ও দিন, ছয় কুমার ছয় ঋতু, চক্রটি সংবৎসর, তার দ্বাদশ অর দ্বাদশ মাস, যিনি পুরুষ তিনি স্বয়ং ইন্দ্র, এবং অশ্ব অগ্নি। তুমি যাবার সময পথে যে বৃষ দেখেছিলে সে ঐরাবত, তার আরোহী ইন্দ্র। তুমি যে পুরীষ খেয়েছ তা অমৃত। নাগলোকে তোমার বিপদ হয় নি, কারণ ইন্দ্র আমার সখা, তাঁর অনুগ্রহে তুমি কুণ্ডল আনতে পেরেছ। সৌম্য, তোমাকে অনুমতি দিচ্ছি স্বগৃহে যাও, তোমার মঙ্গল হবে।

 উতঙ্ক তক্ষকের উপর প্রতিশোধ নেবার সংকল্প ক’রে হস্তিনাপুরে রাজা জনমেজয়ের কাছে গেলেন। জনমেজয় তখন তক্ষশিলা জয় ক’রে ফিরে এসেছেন, মন্ত্রীরা তাঁকে ঘিরে আছেন। উতঙ্ক যথাবিধি আশীর্বাদ ক’রে বললেন, মহারাজ, যে কার্য করা উচিত ছিল তা না ক’রে আপনি বালকের ন্যায় অন্য কার্য করছেন। জনমেজয় তাঁকে সংবর্ধনা ক’রে বললেন, আমি ক্ষাত্রধর্ম অনুসারে প্রজাপালন করে থাকি, আমাকে আপনি কি করতে বলেন? উতঙ্ক বললেন, আপনার পিতা মহাত্মা পরীক্ষিতের যে প্রাণহরণ করেছে সেই দুরাত্মা তক্ষকের উপর আপনি প্রতিশোধ নিন। সেই নৃপতির চিকিৎসার জন্য কাশ্যপ আসছিলেন, কিন্তু তক্ষক তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। আপনি শীঘ্র সর্পসত্রের অনুষ্ঠান করুন এবং জ্বলিত অগ্নিতে সেই পাপীকে আহুতি দিন। তাতে আপনার পিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ হবে, আমিও প্রীত হব, কারণ সেই দুরাত্মা আমার বিঘ্ন করেছিল।