পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উদ্‌যোগপর্ব
৩২৭

আমার উদ্দেশ্য না বুঝেই তুমি অন্যরূপ মনে করছ। তুমি দীর্ঘকাল আমার সঙ্গে বাস করেছ সেজন্য আমার স্বভাব তোমার জানা উচিত; অথবা অগাধ জলে যে ভাসে সে যেমন জলের পরিমাণ বোঝে না তেমনই তুমিও আমাকে বোঝ না। মাধব, তুমি অন্যায় বাক্যে আমাকে ভর্ৎসনা করেছ, আর কেউ এমন করতে সাহস করে না। আত্মপ্রশংসা নীচ লোকের কর্ম, কিন্তু তোমার তিরস্কারে তাড়িত হয়ে আমি নিজের বলের কথা বলছি। —এই অন্তরীক্ষ ও এই জগৎ যদি সহসা ক্রুদ্ধ হয়ে দুই শিলাখণ্ডের ন্যায় ধাবিত হয় তবে আমি দুই বাহু দিয়ে তাদের রোধ করতে পারি। সমস্ত পাণ্ডবশত্রুকে আমি ভূতলে ফেলে পা দিয়ে মর্দন করব। জনার্দন, যখন ঘোর যুদ্ধ উপস্থিত হবে তখন তুমি আমাকে জানতে পারবে। আমার দেহ অবসন্ন হয় না, মন কম্পিত হয় না, সর্বলোক রুদ্ধ হ’লেও আমি ভয় পাই না। সৌহার্দ্য ও ভরতবংশের রক্ষার জন্যই আমি শান্তির কথা বলেছি।

 কৃষ্ণ বললেন, তোমার মনোভাব জানবার জন্য আমি প্রণয়বশেই বলেছি, তিরস্কার বা পাণ্ডিত্যপ্রকাশের জন্য নয়। তোমার মাহাত্ম্য বল ও কীর্তি আমি জানি। তুমি ক্লীবের ন্যায় কথা বলছিলে সেজন্য শঙ্কিত হয়ে আমি তোমার তেজ উদ্দীপিত করেছি।

 অর্জুন বললেন, জনার্দন, আমার যা বলবার ছিল তা যুধিষ্ঠিরই বলেছেন। তুমি মনে করছ যে ধৃতরাষ্ট্রের লোভ এবং আমাদের বর্তমান দুরবস্থার জন্য শান্তিস্থাপন সুসাধ্য হবে না। সম্যক যত্ন করলে কর্ম নিশ্চয়ই সফল হয়। তুমি আমাদের হিতার্থে যা করতে যাচ্ছ তা মৃদু বা কঠোর কি ভাবে সম্পন্ন হবে তা অনিশ্চিত। তুমি যদি মনে কর যে ওদের বধ করাই উচিত তবে অবিলম্বে আমাদের সেই উপদেশই দিও, আর বিচার ক’রো না।

 কৃষ্ণ বললেন, তুমি যা বললে আমি তাই করব, কিন্তু দৈব অনুকূল না হ’লে কেবল পুরুষকারে কর্ম সম্পন্ন হয় না। ধর্মরাজ পাঁচটি গ্রাম চেয়েছেন, কিন্তু দুর্যোধনকে তা বলা উচিত নয়, সেই পাপাত্মা তাতেও সম্মত হবে না। বাক্য ও কর্ম দ্বারা যা সাধ্য তা আমি করব, কিন্তু শান্তির আশা করি না।

 নকুল বললেন, মাধব, ধর্মরাজ ভীমসেন ও অর্জুনের মত তুমি শুনেছ; সে সমস্ত অতিক্রম ক’রে তুমি যা কালোচিত মনে কর তাই করবে। মানুষের মতের স্থিরতা নেই, বনবাসকালে আমাদের একপ্রকার মত ছিল, অজ্ঞাতবাসকালে অন্যপ্রকার হয়েছিল, এখন আবার অন্যপ্রকার হয়েছে। তোমার প্রসাদে আমাদের কাছে সাত অক্ষৌহিণী সেনা সমাগত হয়েছে, এদের দেখলে কে ভীত হবে না? তুমি কৌরব-