পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩৬
মহাভারত

দিন। আমরা সকলে বিপথে চলেছি, আপনি পিতা হয়ে আমাদের সৎপথে আনুন, নিজেও সৎপথে থাকুন। পাণ্ডবরা এই সভাসদ্‌গণকে লক্ষ্য করে বলেছেন, এঁরা ধর্মজ্ঞ, যেন অন্যায় কার্যা না করেন; যে সভায় অধর্ম ধর্মকে এবং অসত্য সত্যকে বিনষ্ট করে সেখানকার সভাসদ্‌গণও বিনষ্ট হন।

 তার পর কৃষ্ণ বললেন, এই সভায় যেসকল মহীপাল আছেন তাঁরা বলুন আমার বাক্য ধর্ম সংগত ও অর্থকর কিনা। মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র, আপনি ক্ষত্রিয়গণকে মৃত্যুপাশ থেকে মুক্ত করুন, ক্রোধের বশীভূত হবেন না। অজাতশত্রু ধর্মাত্মা যুধিষ্ঠির আপনার সঙ্গে যেরূপ ব্যবহার করেছেন তা আপনি জানেন। জতুগৃহদাহের পর তিনি আপনার আশ্রয়েই ফিরে এসেছিলেন। আপনি তাঁকে ইন্দ্রপ্রস্থে পাঠিয়েছিলেন, তিনি সকল রাজাকে বশে এনে আপনারই অধীন করেছিলেন, আপনার মর্যাদা লঙ্ঘন করেন নি। তার পর শকুনি কপট দ্যূতে তাঁর সর্বস্ব হরণ করেছিলেন। সে অবস্থাতেও এবং দ্রৌপদীর নিগ্রহ দেখেও যুধিষ্ঠির ধৈর্যচ্যুত হন নি। মহারাজ, পাণ্ডবগণ আপনার সেবা করতে প্রস্তুত, যুদ্ধ করতেও প্রস্তুত; আপনি যা হিতকর মনে করেন তাই করুন।

১৪। রাজা দম্ভোদ্‌ভব — সুমুখ ও গরুড়

 সভায় যে রাজারা ছিলেন তাঁরা সকলেই মনে মনে কৃষ্ণবাক্যের প্রশংসা করলেন, কিন্তু কিছুই বললেন না, নীরবে রোমাঞ্চিত হয়ে রইলেন। তখন জামদগ্ন্য পরশুরাম বললেন, মহারাজ, আমি একটি সত্য দৃষ্টান্ত বলছি শুনুন।—পুরাকালে দম্ভোদ্‌ভব নামে এক রাজা ছিলেন, তিনি সর্বদা সকলকে প্রশ্ন করতেন, আমার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বা আমার সমান যোদ্ধা কেউ আছে কিনা। এক তপস্বী ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁকে বললেন, গন্ধমাদন পর্বতে নর ও নারায়ণ নামে দুই পুরুষশ্রেষ্ঠ তপস্যা করছেন, তুমি কখনও তাঁদের সমান নও, তাঁদের সঙ্গে যুদ্ধ কর। দম্ভোদ্‌ভব বিশাল সৈন্য নিয়ে গন্ধমাদনে গিয়ে ক্ষুৎপিপাসা ও শীতাতপে শীর্ণ দুই ঋষিকে দেখলেন এবং তাঁদের সঙ্গে যুদ্ধ প্রার্থনা করলেন। নর-নারায়ণ বললেন, এই আশ্রমে ক্রোধ লোভ অস্ত্রশস্ত্র বা কুটিলতা নেই, এখানে যুদ্ধ হ’তে পারে না, তুমি অন্যত্র যাও, পৃথিবীতে বহু ক্ষত্রিয় আছে। দম্ভোেদ্‌ভব শুনলেন না, বার বার যুদ্ধ করতে চাইলেন। তখন নর ঋষি এক মুষ্টি ঈষীকা (কাশ তৃণ) নিয়ে বললেন, যুদ্ধকামী ক্ষত্রিয়, তোমার অস্ত্র আর সৈন্যদল নিয়ে এস। রাজা শরবর্ষণ করতে লাগলেন, কিন্তু