পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩৮
মহাভারত

গরুড় আমার পুত্র চিকুরকে ভক্ষণ করেছে এবং বলেছে এক মাস পরে সুমুখকেও খাবে; এই কারণে আমার মনে সুখ নেই। মাতলি বললেন, সুমুখ আমার সঙ্গে ইন্দ্রের কাছে চলুন, ইন্দ্র গরুড়কে নিবৃত্ত করবেন।

 নারদ ও মাতলি সুমুখকে নিয়ে দেবরাজের কাছে গেলেন, সেখানে ভগবান বিষ্ণুও ছিলেন। নারদের মুখে সকল বৃত্তান্ত শুনে বিষ্ণু বললেন, বাসব, সুমুখকে অমৃত পান করিয়ে অমর কর। ইন্দ্র সুমুখকে দীর্ঘায়ু দিলেন, কিন্তু অমৃত পান করালেন না। তার পর সুমুখ ও মাতলিকন্যা গুণকেশীর বিবাহ হ’ল।

 সুমুখ দীর্ঘায়ু পেরেছেন জেনে গরুড় ক্রুদ্ধ হয়ে ইন্দ্রকে বললেন, তুমি আমাকে নাগভোজনের বর দিয়েছিলে, এখন বাধা দিলে কেন? ইন্দ্র বললেন, আমি বাধা দিই নি, বিষ্ণুই সুমুখকে অভয় দিয়েছেন। গরুড় বললেন, দেবরাজ, আমি ত্রিভুবনের অধীশ্বর হবার যোগ্য, তথাপি পরের ভৃত্য হয়েছি। তুমি থাকতে বিষ্ণু আমার জীবিকায় বাধা দিতে পারেন না, তুমি আর বিষ্ণুই আমার গৌরব নষ্ট করেছ। তার পর গরুড় বিষ্ণুকে বললেন, আমার পক্ষের এক অংশ দিয়েই তোমাকে আমি অক্লেশে বইতে পারি, ভেবে দেখ কে অধিক বলবান। বিষ্ণু বললেন, তুমি অতি দুর্বল হয়েও নিজেকে বলবান মনে করছ; অণ্ডজ, আমার কাছে আত্মশ্লাঘা ক’রো না। আমি নিজেই নিজেকে বহন করি, তোমাকেও ধারণ করি। তুমি যদি আমার বাম বাহুর ভার সইতে পার তবেই তোমার গর্ব সার্থক হবে। এই ব’লে বিষ্ণু তাঁর বাম বাহু গরুড়ের স্কন্ধে রাখলেন, হতচেতন হয়ে গরুড় প’ড়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে গরুড় প্রণাম ক’রে বললেন, প্রভু, আমি তোমার ধ্বজবাসী পক্ষী মাত্র, আমাকে ক্ষমা কর। তোমার বল জানতাম না তাই মনে করতাম আমার বলের তুলনা নেই। তখন বিষ্ণু তাঁর পদাঙ্গুষ্ঠ দিয়ে সুমুখকে গরুড়ের বক্ষে নিক্ষেপ করলেন। সেই অবধি সুমুখের সঙ্গে গরুড় অবিরোধে বাস করেন।

 উপাখ্যান শেষ ক’রে কণ্ব বললেন, গরুড়ের গর্ব এইরূপে নষ্ট হয়েছিল। বৎস দুর্যোধন, যে পর্যন্ত তুমি যুদ্ধে পাণ্ডবদের সম্মুখীন না হচ্ছ সেই পর্যন্তই তুমি জীবিত আছ। তুমি বিরোধ ত্যাগ কর, বাসুদেবকে আশ্রয় করে নিজের কুল রক্ষা কর। সর্বদর্শী নারদ জানেন, এই কৃষ্ণই চক্রগদাধর বিষ্ণু।

 দুর্যোধন কণ্বের দিকে চেয়ে উচ্চহাস্য করলেন এবং গজশুণ্ডতুল্য নিজের ঊরুতে চপেটাঘাত ক’রে বললেন, মহর্ষি, ঈশ্বর আমাকে যেমন সৃষ্টি করেছেন এবং ভবিষ্যতে আমার যা হবে আমি সেই ভাবেই চলছি, কেন প্রলাপ বকছেন?