পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪২
মহাভারত

 উপাখ্যান শেষ ক’রে নারদ বললেন, অভিমানের ফলে যযাতি স্বর্গচ্যুত হয়েছিলেন, অতিশয় নির্বন্ধের জন্য গালবও দুঃখভোগ করেছিলেন। দুর্যোধন, তুমি অভিমান ক্রোধ ও যুদ্ধের অভিপ্রায় ত্যাগ কর, পাণ্ডবদের সঙ্গে সন্ধি কর।

১৬। দুর্যোধনের দুরাগ্রহ

 ধৃতরাষ্ট্র বললেন, ভগবান নারদের কথা সত্য, আমিও সেরূপ ইচ্ছা করি, কিন্তু আমার শক্তি নেই। কৃষ্ণ, তুমি যা বলেছ তা ধর্মসংগত ও ন্যায্য, কিন্তু বৎস, আমি স্বাধীন নই, দুরাত্মা পুত্রেরা আমার আদেশ মানবে না, গান্ধারী বিদুর ভীষ্ম প্রভৃতির কথাও দুর্যোধন শোনে না। তুমিই ওই দুর্বুদ্ধিকে বোঁঝাবার চেষ্টা কর।

 কৃষ্ণ মিষ্ট বাক্যে দুর্যোধনকে বললেন, পুরুষশ্রেষ্ঠ, মহাপ্রাজ্ঞ বংশে তোমার জন্ম, তুমি শাস্ত্রজ্ঞ ও সর্বগুণান্বিত, যা ন্যায়সম্মত তাই কর। সজ্জনের প্রবৃত্তি ধর্মার্থযুক্ত দেখা যায়, কিন্তু তোমাতে তার বিপরীতই দেখছি। ধৃতরাষ্ট্র, ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপ, অশ্বত্থামা, বিদুর, সোমদত্ত, বাহ্নীকরাজ, বিকর্ণ[১], বিবিংশতি[২], সঞ্জয় এবং তোমার জ্ঞাতি ও মিত্রগণ সকলেই সন্ধি চান। তুমি পিতামাতার বশবর্তী হও। যে লোক শ্রেষ্ঠ সুহৃদ্‌গণের উপদেশ অগ্রাহ্য ক’রে হীন মন্ত্রণাদাতাদের মতে চলে সে ঘোর বিপদে পড়ে। তুমি আজন্ম পাণ্ডবদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে আসছ কিন্তু তাঁরা তা সয়েছেন। পাণ্ডবরা যে রাজ্য জয় করেছিলেন তা এখন তুমি ভোগ করছ, কর্ণ দুঃশাসন শকুনি প্রভৃতির সহায়তায় তুমি ঐশ্বর্যলাভ করতে চাচ্ছ। তোমার সমস্ত সৈন্য এবং ভীষ্ম দ্রোণ কর্ণ প্রভৃতি সকলে মিলেও ধনঞ্জয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারবেন না। খাণ্ডবপ্রস্থে যিনি দেবতা গন্ধর্ব যক্ষ প্রভৃতিকে জয় করেছিলেন, কোন্ মানুষ তাঁর সমকক্ষ? শুনেছি বিরাটনগরে বহুজনের সঙ্গে একজনের আশ্চর্য যুদ্ধে হয়েছিল, সেই যুদ্ধই আমার উক্তির যথেষ্ট প্রমাণ। যিনি সাক্ষাৎ মহাদেবকে যুদ্ধে সন্তুষ্ট করেছিলেন, আমি যাঁর সঙ্গে থাকব, সেই অর্জুনকে তুমি জয় করবার আশা কর! রাজা দুর্যোধন, কৌরবকুল যেন বিনষ্ট না হয়, লোকে যেন তোমাকে নষ্টকীর্তি কুলঘ্ন না বলে। পাণ্ডবগণ তোমাকে যুবরাজের পদে এবং ধৃতরাষ্ট্রকে মহারাজের পদে প্রতিষ্ঠিত করবেন, তুমি তাঁদের অর্ধ রাজ্য দিয়ে রাজলক্ষ্মী লাভ কর।

 ভীষ্ম দুর্যোধনকে বললেন, বৎস, তুমি কৃষ্ণের কথা শোন, কুলঘ্ন কুপুরুষ


  1. দুর্যোধনের ভ্রাতা।
  2. দুর্যোধনের ভ্রাতা।