পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০
মহাভারত

তুমি সর্বভুক হবে। অগ্নি বললেন, তুমি কেন এরূপ শাপ দিলে? আমি ধর্মানুসারে রাক্ষসকে সত্য কথাই বলেছি। তুমি ব্রাহ্মণ, আমার মাননীয়, সেজন্য আমি প্রত্যভিশাপ দিলাম না। আমি যোগবলে বহু মূর্তিতে অধিষ্ঠান করি, আমাকে যে আহুতি দেওয়া হয় তাতেই দেবগণ ও পিতৃগণ তৃপ্ত হন, অতএব আমি সর্বভুক কি ক’রে হব?

 অগ্নি দ্বিজগণের অগ্নিহোত্র ও যজ্ঞাদি ক্রিয়া থেকে অন্তর্হিত হলেন। তাঁর অভাবে সকলে অতিশয় কষ্টে পড়ল, ঋষিরা উদ্‌বিগ্ন হয়ে দেবগণের সঙ্গে ব্রহ্মার কাছে গিয়ে শাপের বিষয় জানালেন এবং বললেন, অগ্নির অন্তর্ধানে আমাদের ক্রিয়ালোপ হয়েছে; যিনি দেবগণের মুখ এবং যজ্ঞের অগ্রভাগ ভোজন করেন তিনি কি ক’রে সর্বভুক হ’তে পারেন? ব্রহ্মা মিষ্টবাক্যে অগ্নিকে বললেন, হুতাশন, তুমি ত্রিলোকের ধারয়িতা এবং ক্রিয়াকলাপের প্রবর্তক, ক্রিয়ালোপ করা তোমার উচিত নয়। তুমি সদা পবিত্র, সর্বশরীর দিয়ে তুমি সর্বভুক হবে না, তোমার গুহ্যদেশে যে শিখা আছে এবং তোমার যে ক্রব্যাদ (মাংসভক্ষক) শরীর আছে তাই সর্বভুক হবে। তুমি তেজঃস্বরূপ, মহর্ষি ভৃগু যে শাপ দিয়েছেন তা সত্য কর এবং তোমার মুখে যে আহুতি দেওয়া হবে তাই দেবগণের ও নিজের ভাগরূপে গ্রহণ কর। অগ্নি বললেন, তাই হবে। তখন সকলে সন্তুষ্ট হয়ে নিজ নিজ স্থানে চ’লে গেলেন।

৫। রুরু-প্রমদ্‌বরা--ডুণ্ডুভ

 ভৃগুপুত্র চ্যবনের পত্নীর নাম সুকন্যা, তাঁর গর্ভে প্রমতি জন্মগ্রহণ করেন। প্রমতির ঔরসে ঘৃতাচীর গর্ভে রুরু নামক পুত্র উৎপন্ন হন। এই বুরুর কথা এখন বলব।

 স্থূলকেশ নামে খ্যাত সর্বভূতহিতে রত এক মহর্ষি ছিলেন। গন্ধর্বরাজ বিশ্বাবসুর সহিত সহবাসে মেনকা গর্ভবতী হন। সেই নির্দয়া নির্লজ্জা অপ্সরা নদীতীরে তাঁর কন্যাসন্তানকে পরিত্যাগ করেন। মহর্ষি স্থূলকেশ দেবকন্যার ন্যায় কান্তিমতী সেই কন্যাটিকে দেখতে পেয়ে তাকে নিজের আশ্রমে এনে পালন করতে লাগলেন। এই কন্যা স্বভাবে রূপে গুণে সকল প্রমদার শ্রেষ্ঠ সেজন্য মহর্ষি তার নাম রাখলেন—প্রমদ্‌বরা। রুরু সেই কন্যাকে দেখে মোহিত হলেন। তাঁর পিতা প্রমতির অনুরোধে স্থূলকেশও কন্যাদান করতে সম্মত হলেন।

 কিছুদিন পরে বিবাহকাল আসন্ন হ’ল। প্রমদ্‌বরা তাঁর সখীদের সঙ্গে খেলা