পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উদ্‌যোগপর্ব
৩৪৫

১৭। গান্ধারীর উপদেশ—কৃষ্ণের সভাত্যাগ

 কৃষ্ণের কথায় ধৃতরাষ্ট্র ব্যস্ত হয়ে বিদুরকে বললেন, দূরদর্শিনী গান্ধারীকে এখানে ডেকে আন, আমি তাঁর সঙ্গে দুর্যোধনকে অনুনয় করব। গান্ধারী এলে ধৃতরাষ্ট্র বললেন, তোমার দুরাত্মা অবাধ্য পুত্র প্রভুত্বের লোভে রাজ্য ও প্রাণ দুই হারাচ্ছে, সুহৃদ্‌গণের উপদেশ না শুনে সে অশিষ্টের ন্যায় সভা থেকে চ’লে গেছে।

 গান্ধারী বললেন, অশিষ্ট অবিনীত ধর্মনাশক লোকের রাজ্য পাওয়া উচিত নয় তথাপি সে পেয়েছে। মহারাজ, তুমিই দোষী, পুত্রের দুষ্ট প্রবৃত্তি জেনেও স্নেহবশে তার মতে চলেছ, মূঢ় দুরাত্মা লোভী কুসঙ্গী পুত্রকে রাজ্য দিয়ে এখন তার ফল ভোগ করছ।

 ধৃতরাষ্ট্রের আদেশে বিদুর দুর্যোধনকে আবার সভায় নিয়ে এলেন। গান্ধারী বললেন, পুত্র, তোমার পিতা ও ভীষ্মদ্রোণাদি সুহৃদ্‌বর্গের কথা রাখ। রাজত্বের অর্থ মহৎ প্রভুত্ব, দুরাত্মারা এই পদ কামনা করে কিন্তু রাখতে পারে না। যে লোক কামনা বা ক্রোধের বশে আত্মীয় বা অন্যের প্রতি অন্যায় আচরণ করে, কেউ তার সহায় হয় না। পাণ্ডবগণ ঐক্যবদ্ধ মহাপ্রাজ্ঞ বীর, তাঁদের সঙ্গে মিলিত হ’লে তুমি সুখে পৃথিবী ভোগ করতে পারবে। বৎস, ভীষ্ম-দ্রোণ যা বলেছেন তা সত্য, কৃষ্ণার্জুন অজেয়। তুমি কেশবের শরণাপন্ন হও, তা হ’লে তিনি উভয় পক্ষের মঙ্গল করবেন। যুদ্ধে কল্যাণ নেই, ধর্ম বা অর্থ নেই, সুখ নেই, সর্বদা জয়ও হয় না। তুমি তের বৎসর পাণ্ডবদের প্রচুর অপকার করেছ, তোমার কামনা আর ক্রোধের জন্য তা বর্ধিত হয়েছে, এখন তার উপশম কর। মূঢ় তুমি মনে কর ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ প্রভৃতি তোমার জন্য যুদ্ধে সর্ব শক্তি প্রয়োগ করবেন, কিন্তু তা হবে না। কারণ, এই রাজ্যে তোমাদের আর পাণ্ডবদের সমান অধিকার, দুই পক্ষের সঙ্গেই এঁদের সমান স্নেহসম্বন্ধ, কিন্তু পাণ্ডবরা অধিকতর ধর্মশীল। ভীষ্মাদি তোমার অন্নে পালিত সেজন্য জীবন বিসর্জন দিতে পারেন, কিন্তু যুধিষ্ঠিরকে শত্রুরূপে দেখতে পারবেন না। বৎস, কেবল লোভ করলে সম্পত্তিলাভ হয় না, লোভ ত্যাগ কর, শান্ত হও।

 মাতার কথায় অনাদর দেখিয়ে দুর্যোধন ক্রুদ্ধ হয়ে শকুনি কর্ণ ও দুঃশাসনের কাছে গেলেন। তাঁরা মন্ত্রণা করে স্থির করলেন, কৃষ্ণ ক্ষিপ্রকারী, তিনি ধৃতরাষ্ট্র আর ভীষ্মের সঙ্গে মিলিত হয়ে আমাদের বন্ধন করতে চান; অতএব আমরাই আগে তাঁকে সবলে নিগৃহীত করব, তাতে পাণ্ডবরা বিমূঢ় ও নিরুৎসাহ