তখন কৃষ্ণ পূর্ব রূপ গ্রহণ করলেন এবং ঋষিদের অনুমতি নিয়ে সাত্যকি আর বিদুরের হাত ধ’রে সভা থেকে বেরিয়ে এলেন। নারদাদি মহর্ষিগণও অন্তর্হিত হলেন।
দারুকের আনীত রথে উঠে কৃষ্ণ যখন প্রস্থানের উপক্রম করছিলেন তখন ধৃতরাষ্ট্র তাঁর কাছে এসে বললেন, জনার্দন, পুত্রদের উপর আমার কতটুকু প্রভাব তা তুমি দেখলে। আমার দুরভিসন্ধি নেই, দুর্যোধনকে যা বলেছি তা তুমি শুনেছ। সকলেই জানে যে আমি সর্বপ্রযত্নে শান্তির চেষ্টা করেছি।
ধৃতরাষ্ট্র ও ভীষ্মদ্রোণাদিকে কৃষ্ণ বললেন, কৌরবসভায় যা হ’ল তা আপনারা দেখলেন, দুর্যোধন আমাকে বন্দী করবার চেষ্টা করেছে তাও জানেন। ধৃতরাষ্ট্রও বলছেন তাঁর কোনও প্রভুত্ব নেই। এখন আপনারা আজ্ঞা দিন আমি যুধিষ্ঠিরের কাছে ফিরে যাব। এই ব’লে কৃষ্ণ রথারোহণে কুন্তীর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন।
১৮। কৃষ্ণ ও কুন্তী—বিদুলার উপাখ্যান
কুন্তীকে প্রণাম ক’রে কৃষ্ণ তাঁকে কৌরবসভার সমস্ত বৃত্তান্ত জানালেন। কুন্তী বললেন, কেশব, তুমি যুধিষ্ঠিরকে আমার এই কথা ব’লো।—পত্র, তুমি মন্দমতি, শ্রোত্রিয় ব্রাহ্মণের ন্যায় কেবল শাস্ত্র আলোচনা ক’রে তোমার বদ্ধি বিকৃত হয়েছে, তুমি কেবল ধর্মেরই চিন্তা করছ। ক্ষত্রিয়ের যে ধর্ম স্বয়ম্ভু ব্রহ্মা নির্দিষ্ট করেছেন তুমি তার দিকে মন দাও। তিনি তাঁর বাহু থেকে ক্ষত্রিয় সৃষ্টি করেছেন সেজন্য বাহুবলই ক্ষত্রিয়গণের উপজীব্য, সর্বদা নির্দয় কর্মে নিযুক্ত থেকে তাঁদের প্রজাপালন করতে হয়। রাজা যদি উপযুক্ত রূপে দণ্ডনীতি প্রয়োগ করেন তবেই চার বর্ণের লোক স্বধর্ম পালন করেন। এমন মনে করো না যে কালপ্রভাবেই রাজার দোষগুণ হয়; রাজার সদসৎ কর্ম অনুসারেই সত্য ত্রেতা দ্বাপর বা কলি যুগ উৎপন্ন হয়। তুমি পিতৃপিতামহের আচরিত রাজধর্ম পালন কর, তুমি যে ধর্ম চাও তা রাজর্ষিদের ধর্ম নয়। দুর্বল বা অহিংসাপরায়ণ রাজা প্রজাপালন করতে পারেন না। আমি সর্বদা এই আশীর্বাদ করছি যে তুমি যজ্ঞ দান ও তপস্যা কর, শৌর্য প্রজা বংশ বল ও তেজ লাভ কর। মহাবাহু সাম দান ভেদ বা দণ্ডনীতির দ্বারা তোমার পৈতৃক রাজ্যাংশ উদ্ধার কর। তোমার জননী হয়েও আমাকে পরদত্ত অন্নপিণ্ডের প্রত্যাশায় থাকতে হয় এর চেয়ে দুঃখ আর কি আছে? কৃষ্ণ, আমি বিদুলা ও তাঁর পুত্রের কথা বলছি, তুমি যুধিষ্ঠিরকে শুনিও।—