পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪৮
মহাভারত

 বিদুলা নামে এক যশস্বিনী তেজস্বিনী ক্ষত্রিয়নারী ছিলেন। তাঁর পুত্র সঞ্জয় সিন্ধুরাজ কর্তৃক পরাজিত হয়ে দুঃখিতমনে শুয়ে আছেন দেখে বিদুলা বললেন, তুমি আমার পুত্র নও, তুমি কোথা থেকে এসেছ? তুমি ক্রোধহীন ক্লীবতুল্য, তুমি যাবজ্জীবন নিরাশ হয়ে থাকতে চাও। নিজেকে অবজ্ঞা ক’রো না, অল্পে তুষ্ট হয়ো না, নির্ভীক ও উৎসাহী হও। রে ক্লীব, তোমার সকল কীর্তি নষ্ট হয়েছে, রাজ্য পরহস্তগত হয়েছে, তবে বেঁচে আছ কেন? লোকে যার মহৎ চরিত্রের আলোচনা করে না সে পুরুষ নয়, স্ত্রীও নয়, সে কেবল মানুষের সংখ্যা বাড়ায়। যার দান তপস্যা শৌর্য বিদ্যা বা অর্থের খ্যাতি নেই সে তার মাতার বিষ্ঠা মাত্র। পুত্র, নির্বাপিত অগ্নির ন্যায় কেবল ধূমায়িত হয়ো না, মুহূর্তকালের জন্যও জ্ব’লে ওঠ, শত্রুকে আক্রমণ কর।

 বিদুলার পুত্র সঞ্জয় বললেন, আমি যদি যুদ্ধে মরি তবে সমস্ত পৃথিবী পেয়েও আপনার কি লাভ হবে? অলংকার সুখভোগ বা জীবনেই বা কি হবে? বিদুলা বললেন, যিনি নিজের বাহুবল আশ্রয় ক’রে জীবনধারণ করেন তিনিই কীর্তি ও পরলোকে সদ্‌গতি লাভ করেন। সিন্ধুরাজের প্রজারা সন্তুষ্ট নয়, কিন্তু তারা মূঢ় ও দুর্বল, তাই রাজার বিপদের প্রতীক্ষায় নিশ্চেষ্ট হয়ে আছে। তুমি যদি নিজের পৌরুষ দেখাও তবে অন্য রাজারা সিন্ধুরাজের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন। তাঁদের সঙ্গে মিলিত হয়ে তুমি গিরিদুর্গে থেকে সুযোগের প্রতীক্ষা কর, সিন্ধুরাজ অজর অমর নন। যুদ্ধের ফলে তোমার সমৃদ্ধিলাভ হবে কিংবা ক্ষতি হবে তার বিচার না ক’রেই যুদ্ধে প্রবৃত্ত হও। আমি মহাকুলে জন্মগ্রহণ ক’রে তোমাদের মহাকুলে এসেছি, আমি রাজ্যের অধিশ্বরী মঙ্গলময়ী ও পতির আদরিণী ছিলাম। সঞ্জয়, আমাকে আর তোমার পত্নীকে যদি দীনদশাগ্রস্ত দেখ তবে তোমার জীবনে প্রয়োজন কি? শত্রুদের বশে আনতে পারলে ক্ষত্রিয় যে সুখ লাভ করেন সে সুখে ইন্দ্রভবনেও নেই। যুদ্ধে প্রাণবিসর্জন অথবা শত্রুর বিনাশ—এ ছাড়া ক্ষত্রিয়ের শান্তিলাভ হ’তে পারে না।

 সঞ্জয় বললেন, আপনি আমার প্রতি নিষ্ঠুর, আপনার হৃদয় কৃষ্ণলৌহে নির্মিত। আমার ধন নেই, সহায়ও নেই, কি করে জয়লাভ করব? এই দারুণ অবস্থা জেনেই আমার রাজ্যোদ্ধারের ইচ্ছা নিবৃত্ত হয়েছে। আপনি পরিণতবুদ্ধি, যদি কোনও উপায় জানেন তো বলুন, আমি সর্বতোভাবে আপনার আদেশ পালন করব।

 বিদুলা বললেন, তুমি পূর্বে যে বীরত্ব দেখিয়েছ তা আবার দেখাও,