পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উদ্‌যোগপর্ব
৩৪৯

তা হ’লেই রাজ্য উদ্ধার করতে পারবে। যারা সিন্ধুরাজের উপর কুদ্ধ, যাদের তিনি শক্তিহীন ও অপমানিত করেছেন, যারা তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করতে চায়, তাদের সঙ্গে তুমি মিত্রতা কর। তুমি জান না, আমাদের রাজকোষে বহু ধন আছে। তোমার অনেক সুহৃৎও আছেন যাঁরা সুখদুঃখ সইতে পারেন এবং যুদ্ধ থেকে পালান না।

 বিদুলার কথায় সঞ্জয়ের মোহ দূর হ’ল, তিনি বাক্যবাণে তাড়িত হয়ে জননীর উপদেশে যুদ্ধের উদ্‌যোগ করলেন এবং জয়ী হলেন। কোনও রাজা শত্রুর পীড়নে অবসন্ন হ’লে তাঁকে তাঁর মন্ত্রী এই উৎসাহজনক তেজোবর্ধক উপাখ্যান শোনাবেন। বিজয়েচ্ছু রাজা ‘জয়’ নামক এই ইতিহাস শুনবেন। গর্ভিণী এই উপাখ্যান বার বার শুনলে বীরপ্রসবিনী হন।

 কুন্তীকে প্রণাম ও প্রদক্ষিণ করে কৃষ্ণ ভীষ্মাদির নিকট বিদায় নিলেন, তার পর কর্ণকে নিজের রথে তুলে নিয়ে সাত্যকির সঙ্গে যাত্রা করলেন।

১৯। কৃষ্ণ-কর্ণ-সংবাদ

 যেতে যেতে কৃষ্ণ কর্ণকে বললেন, রাধেয়, তুমি বেদজ্ঞ রাহ্মণদের সেবা করেছ এবং তাঁদের কাছে ধর্মশাস্ত্রের সূক্ষ্ম তত্ত্বসকল শিখেছ। কুমারী কন্যার গর্ভে দুইপ্রকার পুত্র হয়, কানীন[১] ও সহোঢ়[২]। শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতগণ বলেন, কন্যাকে যে বিবাহ করে সেই লোকই এই দুইপ্রকার পুত্রের পিতা। কর্ণ, তুমি কানীন পুত্র এবং ধর্মানুসারে পাণ্ডুরই পত্র। অতএব তুমিই রাজা হও, তোমার পিতৃপক্ষীয় পাণ্ডবগণ এবং মাতৃপক্ষীয় বৃষ্ণিগণ দুই পক্ষকেই তোমার সহায় বলে জেনো। তুমি আজ আমার সঙ্গে চল, পাণ্ডবরা জানুন যে তুমি যুধিষ্ঠিরের অগ্রজ। তোমার পাঁচ ভ্রাতা, দ্রৌপদীর পাঁচ পুত্র এবং অভিমন্যু তোমার চরণ ধারণ করবেন; সমাগত রাজারা এবং অন্ধক ও বৃষ্ণিবংশীয় সকলেই তোমার পদানত হবেন। রাজা ও রাজকন্যারা তোমার অভিষেকের জন্য হিরণ্ময় রজতময় ও মৃণ্ময় কুম্ভ এবং ওষধি বীজ রত্ন প্রভৃতি উপকরণ নিয়ে আসবেন দ্রৌপদীও ষষ্ঠ[৩] কালে


  1. কুমারী যাকে বিবাহের পূর্বে প্রসব করে।
  2. গর্ভবতী কুমারী বিবাহের পর যাকে প্রসব করে।
  3. পঞ্চপাণ্ডবের জন্য নির্ধারিত পঞ্চকালের অতিরিক্ত।