পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উদ্‌যোগপর্ব
৩৫১

ফিরে গিয়ে ভীষ্ম দ্রোণ ও কৃপকে ব’লো, এই মাস[১] অতি শুভকাল, এখন পশুখাদ্য ও ইন্ধন সুলভ, শস্য পরিপুষ্ট, বৃক্ষ সকল ফলবান, মক্ষিকা অল্প, পথে কর্দম নেই, জল স্বাদু হয়েছে, শীত বা গ্রীষ্ম অধিক নয়। সাত দিন পরে অমাবস্যা, সেই দিন সংগ্রাম আরম্ভ হ’ক। যুদ্ধের জন্য সমাগত রাজাদের ব’লো যে তাঁদের অভীষ্ট পূর্ণ হবে, দুর্যোধনের অনুগামী রাজা ও রাজপুত্রগণ অস্ত্রাঘাতে নিহত হয়ে উত্তম গতি লাভ করবেন।

 কর্ণ বললেন, মহাবাহু সব জেনেও কেন আমাকে ভোলাতে চাচ্ছ? এই পৃথিবীর ধ্বংস আসন্ন, দুর্যোধন দুঃশাসন শকুনি আর আমি তার নিমিত্তস্বরূপ। আমি দারুণ স্বপ্ন ও দুর্লক্ষণ দেখেছি, তুমি যেন রুধিরাক্ত পৃথিবীকে হাতে ধ’রে নিক্ষেপ করছ, অস্থিস্তূপের উপরে উঠে যুধিষ্ঠির যেন সুবর্ণ পাত্রে ঘৃতপায়স ভোজন করছেন এবং তোমার প্রদত্ত পৃথিবী গ্রাস করছেন। কৃষ্ণ বললেন, আমার কথা যখন তোমার হৃদয়ে প্রবেশ করলে না তখন অবশ্যই পৃথিবীর বিনাশ হবে। কর্ণ বললেন, কৃষ্ণ, এই মহাযুদ্ধ থেকে উত্তীর্ণ হয়ে আমরা কি আবার তোমাকে দেখতে পাব? অথবা স্বর্গেই আমাদের মিলন হবে? এখন আমি যাচ্ছি। এই ব’লে কর্ণ কৃষ্ণকে গাঢ় আলিঙ্গন ক’রে রথ থেকে নামলেন এবং নিজের রথে উঠে দীনমনে প্রস্থান করলেন। কৃষ্ণ ও সাত্যকি তাঁদের সারথিকে বললেন, শীঘ্র চল।

২০। কর্ণ-কুন্তী-সংবাদ

 কৃষ্ণ চ’লে গেলে বিদুর কুন্তীকে বললেন, আপনি জানেন, যুদ্ধ নিবারণের জন্য আমি সর্বদা চেষ্টা করেছি, কিন্তু দুর্যোধন আমার কথা শোনে নি। বৃদ্ধ ধৃতরাষ্ট্র পুত্রের বশবর্তী হয়ে অধর্মের পথে চলেছেন। কৃষ্ণ অকৃতকার্য হয়ে ফিরে গেলেন, এখন পাণ্ডবগণ যুদ্ধের উদ্‌যোগ করবেন। কৌরবদের দুর্নীতির ফলে বীরগণ বিনষ্ট হবেন, এই চিন্তা করে আমি দিবারাত্র বিনিদ্র হয়ে আছি।

 কুন্তী দঃখার্ত হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলেন, যদ্ধে হ’লেও দোষ না হ’লেও দোষ। দুর্যোধনাদির পক্ষে ভীষ্ম দ্রোণ আর কর্ণ থাকবেন এজন্যই আমার ভয়। হয়তো দ্রোণ তাঁর শিষ্যের সঙ্গে যুদ্ধ কামনা করেন না, পিতামহ ভীষ্ম হয়তো পাণ্ডবগণের প্রতি স্নেহশীল হবেন। অবিবেচক দুর্মতি কর্ণই দুর্যোধনের বশবর্তী হয়ে


  1. অগ্রহায়ণ।