পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
১১

করতে করতে দুর্দৈবক্রমে একটি সুপ্ত সর্পের দেহে পা দিয়ে ফেললেন। সর্পের দংশনে প্রমদ্‌বরা বিবর্ণ বিগতশ্রী ও হতচেতন হয়ে পড়ে গেলেন। স্থূলকেশ এবং অন্যান্য ঋষিরা দেখলেন পদ্মকান্তি সেই বালা নিস্পন্দ হয়ে প’ড়ে আছেন। প্রমতি ও বনবাসী অন্যান্য ব্রাহ্মণগণ সেখানে এসে কাঁদতে লাগলেন। শোকার্ত রুরু গহন বনে গিয়ে করুণস্বরে বিলাপ করতে করতে বললেন, যদি আমি দান তপস্যা ও গুরুজনের সেবা ক’রে থাকি, যদি জন্মাবধি ব্রতপালন করে থাকি, কৃষ্ণ বিষ্ণু হষীকেশে যদি আমার অচলা ভক্তি থাকে, তবে আমার প্রিয়া এখনই জীবনলাভ করুন।

 রুরুর বিলাপ শানে দেবতারা কৃপান্বিত হয়ে একজন দূত পাঠালেন। এই দেবদূত রুরুকে বললেন, বৎস, এই কন্যার আয়ু শেষ হয়েছে, তুমি বৃথা শোক ক’রো না। তবে দেরতারা একটি উপায় নির্দিষ্ট করেছেন, তা যদি করতে পার তবে প্রমদ্‌বরাকে ফিরে পাবে। রুরু বললেন, হে আকাশচারী, বলুন সেই উপায় কি, আমি তাই করব। দেবদূত বললেন, এই কন্যাকে তোমার আয়ুর অর্ধ দান কর, তা হলেই সে জীবিত হবে। রুরু বললেন, আমি অর্ধ আয়ু দিলাম, আমার প্রিয়া সৌন্দর্যময়ী ও সালংকারা হয়ে উত্থান করুন।

 প্রমদ্‌বরার পিতা গন্ধর্বরাজ বিশ্বাবসু দেবদূতের সঙ্গে যমের কাছে গিয়ে বললেন, ধর্মরাজ, আপনি যদি অনুমতি দেন তবে মৃতা প্রমদ্‌বরা রুরুর অর্ধ আয়ু নিয়ে বেঁচে উঠুক। যম বললেন, তাই হ’ক। তখন বরবর্ণিনী প্রমদ্‌বরা যেন নিদ্রা থেকে গাত্রোত্থান করলেন। প্রমতি ও স্থূলকেশ মহানন্দে বরকন্যার বিবাহ দিলেন।

 রুরু অত্যন্ত কোপান্বিত হয়ে সর্পকুল বিনষ্ট করবার প্রতিজ্ঞা করলেন এবং যথাশক্তি সকলপ্রকার সর্পই বধ করতে লাগলেন। একদিন তিনি বনে গিয়ে দেখলেন এক বৃদ্ধ ডুণ্ডুভ (ঢোঁড়া সাপ) শুয়ে আছে। রুরু তখনই তাকে দণ্ডাঘাতে মারতে গেলেন। ডুণ্ডুভ বললে, তপোধন, আমি কোনও অপরাধ করি নি, তবে কেন আমাকে মারতে চান? রুরু বললেন, আমার প্রাণসমা ভার্যাকে সাপে কামড়েছিল, সেজন্য প্রতিজ্ঞা করেছি সাপ দেখলেই মারব। ডুণ্ডুভ বললে, যারা মানুষকে দংশন করে তারা অন্যজাতীয়, আপনি ধর্মজ্ঞ হয়ে ডুণ্ডুভ বধ করতে পারেন না। রুরু জিজ্ঞাসা করলেন, ডুণ্ডুভ, তুমি কে? ডুণ্ডুভ উত্তর দিলে, পূর্বে আমি সহস্রপাৎ নামে ঋষি ছিলাম। খগম নামে এক ব্রাহ্মণ আমার সখা ছিলেন, তাঁর বাক্য অব্যর্থ। একদিন তিনি অগ্নিহোত্রে নিযুক্ত ছিলেন সেই সময়ে আমি বালসুলভ খেলার ছলে একটি