পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উদ্‌যোগপর্ব
৩৫৯

 দুর্যোধন রাশি রাশি উপহার দিয়ে ভীষ্মকে সেনাপতির পদে যথাবিধি অভিষিক্ত করলেন, শত সহস্র ভেরী ও শঙ্খ বেজে উঠল। এই সময়ে নানাপ্রকার অশুভ লক্ষণ দেখা গেল, বজ্রধ্বনি ভূমিকম্প উল্কাপাত ও রুধিরকর্দমবৃষ্টি হ’ল। যোদ্ধারা নিরুদ্যম হয়ে পড়লেন। তার পর ভীষ্মকে অগ্রবর্তী ক’রে প্রচুর স্কন্ধাবার সহ দুর্যোধন প্রভৃতি কুরুক্ষেত্রে উপস্থিত হলেন।


॥ উলূকদূতাগমনপর্বাধ্যায় ॥

২৫। উলূকের দৌত্য

 কুরুক্ষেত্রে হিরন্বতী নদীর নিকটে পাণ্ডববাহিনী সন্নিবেশিত হ’লে কৌরবগণও সেখানে তাঁদের সেনা স্থাপিত করলেন। কর্ণ দুঃশাসন ও শকুনির সঙ্গে মন্ত্রণা করে দুর্যোধন স্থির করলেন যে শকুনির পুত্র উলূক দূত হয়ে পাণ্ডবদের কাছে যাবেন। তিনি উলূককে এইরূপ উপদেশ দিলেন।

 তুমি যুধিষ্ঠিরকে বলবে, তুমি সর্ব প্রাণীকে অভয় দিয়ে থাক, তবে নৃশংসের ন্যায় জগৎ ধ্বংস করতে চাও কেন? পুরাকালে দেবগণ প্রহ্লাদের রাজ্য হরণ করলে প্রহ্লাদ এই শ্লোকটি গেয়েছিলেন—হে সুরগণ, প্রকাশ্যে ধর্মের ধ্বজা উন্নত রাখা এবং প্রচ্ছন্নভাবে পাপাচরণ করার নাম বৈড়াল ব্রত। উলূক, নারদকথিত এই উপাখ্যানটি তুমি যুধিষ্ঠিরকে শুনিও।—এক দৃষ্ট বিড়াল গঙ্গাতীরে ঊর্ধ্ববাহু হয়ে তপস্যার ভান করত। পক্ষীরা তার কাছে গিয়ে প্রশংসা করতে লাগল, তখন বিড়াল ভাবলে, আমার ব্রত সফল হয়েছে। দীর্ঘকাল পরে এক দল মূষিক স্থির করলে, এই বিড়াল আমাদের মাতুল, ইনি আমাদের সকলকে রক্ষা করবেন। মূষিকদের প্রার্থনা শুনে বিড়াল বললে, তপস্যা এবং তোমাদের রক্ষা এই দুই কর্ম এক কালে করা অসম্ভব, তথাপি তোমাদের যাতে হিত হয় তা করব। কিন্তু আমি তপস্যায় পরিশ্রান্ত হয়ে আছি, কঠিন ব্রত পালন করছি, কোথাও যাবার শক্তি আমার নেই। বৎসগণ, তোমরা আমাকে প্রত্যহ নদীতীরে বহন করে নিয়ে যেয়ো। মূষিকরা সম্মত হ’ল এবং বালক বৃদ্ধ সকলেই বিড়ালের আশ্রয়ে এল। মূষিক ভক্ষণ ক’রে বিড়ালের শরীর ক্রমশ স্থূল চিক্কণ ও বলিষ্ঠ হতে লাগল। মূষিকরা ভাবলে, মাতুল নিত্য বৃদ্ধি পাচ্ছেন কিন্তু আমাদের ক্ষয় হচ্ছে কেন? একদিন ডিণ্ডিক নামে এক মূষিক বিড়ালের আচরণ লক্ষ্য করবার জন্য তার সঙ্গে সঙ্গে গেল, বিড়াল