পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
মহাভারত

তৃণনির্মিত সর্প নিয়ে ভয় দেখিয়েছিলাম, তাতে তিনি মূর্ছিত হন। সংজ্ঞালাভ করে তিনি সক্রোধে বললেন, আমাকে ভয় দেখাবার জন্য তুমি যেমন নির্বিষ সপ নির্মাণ করেছ, আমার শাপে তুমিও সেইরূপ হবে। আমি উদ্‌বিগ্ন হয়ে কৃতাঞ্জলিপুটে তাঁকে বললাম, আমি আপনাকে সখা জ্ঞান ক’রে এই পরিহাস করেছি, আমাকে ক্ষমা করুন, শাপ প্রত্যাহার করুন। খগম বললেন, যা বলেছি তা মিথ্যা হবে না, তবে আমার এই কথা শুনে রাখ—প্রমতির পুত্র রুরুর দর্শন পেলে তুমি শাপমুক্ত হবে। তুমি সেই রুরু, আজ আমি পূর্বরূপ ফিরে পাব।

 ঋষি সহস্রপাৎ ডুণ্ডুভরূপ ত্যাগ করলেন এবং তেজোময় পূর্বরূপ লাভ ক’রে রুরুকে বললেন,

অহিংসা পরমোধর্মঃ সর্বপ্রাণভৃতাং স্মৃতঃ॥
তস্মাৎ প্রাণভৃতঃ সর্বান্ ন হিংস্যাদ্ ব্রাহ্মণঃ ক্বচিৎ।
ব্রাহ্মণঃ সৌম্য এবেহ ভবতীতি পরা শ্রুতিঃ॥
বেদবেদাঙ্গবিৎ তাত সর্বভূতাভয়প্রদঃ।
অহিংসা সত্যবচনং ক্ষমা চেতি বিনিশ্চিতম্॥
ব্রাহণস্য পরো ধর্মো বেদানাং ধারণাপি চ।
ক্ষত্রিয়স্য হি যো ধর্মঃ সহি নেষ্যেত বৈ তব॥

—সর্ব প্রাণীর অহিংসাই পরম ধর্ম; অতএব ব্রাহ্মণ কখনও কোনও প্রাণীর হিংসা করবেন না। বৎস, এইরূপ শ্রুতিবাক্য আছে যে ব্রাহ্মণ শান্তমূর্তি বেদবেদাঙ্গবিৎ এবং সর্ব প্রাণীর অভয়দাতা হবেন, তাঁর পক্ষে অহিংসা, সত্যকথন, ক্ষমা ও বেদের ধারণাই পরম ধর্ম। ক্ষত্রিমের যে ধর্ম তা তোমার গ্রহণীয় নয়।

 তার পর সহস্রপাৎ বললেন, দণ্ডদান, উগ্রতা ও প্রজাপালন ক্ষত্রিয়ের ধর্ম। পূর্বকালে জনমেজয়ের সর্পযজ্ঞে সর্পসমূহ বিনষ্ট হচ্ছিল, কিন্তু তপোবলসম্পন্ন বেদবেদাঙ্গবিৎ দ্বিজশ্রেষ্ঠ আস্তীক ভীত সর্পগণকে পরিত্রাণ করেছিলেন।

 রুরু সেই ইতিহাস জানতে চাইলে সহস্রপাৎ বললেন, আমি এখন যাবার জন্য ব্যস্ত হয়েছি, তুমি ব্রাহ্মণদের কাছে সব শুনতে পাবে। এই বলে তিনি অন্তর্হিত হলেন। রুরু তাঁকে চতুর্দিকে অন্বেষণ ক’রে পরিশ্রান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়লেন, তারপর আশ্রমে ফিরে এসে পিতার নিকট সর্পযজ্ঞের বৃত্তান্ত শুনলেন।