পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
১৩

॥আস্তীকপর্বাধ্যায়॥

৬। জরৎকারু মুনি—কদ্রু ও বিনতা—সমুদ্রমন্থন

 শৌনক বললেন, তুমি জনমেজয়ের সম্পযজ্ঞ ও আস্তীকের ইতিহাস বল।

 সৌতি বললেন।—আস্তীকের পিতার নাম জরৎকারু, তিনি মহাতপা ব্রহ্মচারী ঊর্দ্ধরেতা পরিব্রাজক ছিলেন। একদিন তিনি পর্যটন করতে করতে দেখলেন, কতকগুলি মানুষ উশীর (বেনা) তৃণ অবলম্বন ক’রে ঊর্ধ্বপাদ অধোমুখ হয়ে গর্তের উপর ঝুলছেন। জরৎকারুর প্রশ্নের উত্তরে তাঁরা বললেন, আমরা যাযাবর নামক ঋষি ছিলাম। জরৎকারু নামে আমাদের একটি পুত্র আছে, সেই মূঢ় কেবল তপস্যা করে, বিবাহ এবং সন্তান উৎপাদনের চেষ্টা তার নেই। আমরা অনাথ হয়ে বংশলোপের আশঙ্কায় পাপীর ন্যায় এই গর্তে লম্বমান রয়েছি। জরৎকারু বললেন, আপনারা আমারই পিতৃপুরুষ, বলুন কি করব। পিতৃগণ বললেন, বৎস, দারগ্রহণ ও সন্তান উৎপাদন কর, তাতেই আমাদের পরম মঙ্গল হবে। জরৎকারু বললেন, আমি নিজের জন্য বিবাহ বা ধনোপার্জন করব না, আপনাদের হিতের জন্যই দারগ্রহণ করব। যে কন্যার নাম আমার নামের সমান, যাকে তার আত্মীয়রা স্বেচ্ছায় দান করবে, তাকেই আমি ভিক্ষাস্বরূপ নেব।

 জরৎকারউ বিবাহার্থী হয়ে ভ্রমণ করতে লাগলেন। একদিন তিনি বনে গিয়ে ধীর ও উচ্চ কণ্ঠে তিনবার কন্যা ভিক্ষা করলেন। তখন বাসুকি তাঁর ভগিনীকে নিয়ে এসে বললেন, দ্বিজোত্তম, আপনি একে গ্রহণ করুন। কন্যার নাম আর নিজের নাম এক জেনে জরৎকারু তাঁকে বিবাহ করলেন। আস্তীক নামে তাঁদের এক পুত্র হ’ল, তিনিই সর্পগণকে ত্রাণ করেন এবং পিতৃগণকেও উদ্ধার করেন।

 শৌনক বললেন, বৎস সৌতি, তোমার কথা অতি মধুর, আমরা আরও শুনতে ইচ্ছা করি। সৌতি বলতে লাগলেন।—

 পুরাকালে সত্যযুগে দক্ষ প্রজাপতির কদ্রু ও বিনতা নামে দুই সলক্ষণা রূপবতী কন্যা ছিলেন, তাঁরা কশ্যপের ধর্মপত্নী। কশ্যপ তাঁদের বর দিতে ইচ্ছা করলে কদ্রু বললেন, তুল্যবলশালী সহস্র নাগ আমার পত্র হ’ক; বিনতা বললেন, আমাকে দুই পুত্র দিন যারা কদ্রুর পুত্রের চেয়েও বলবান ও তেজস্বী। কশ্যপ দুই পত্নীকেই অভীষ্ট বর দিলেন। যথাকালে কদ্রু এক সহস্র এবং বিনতা দুই ডিম্ব প্রসব করলেন। পাঁচ শ বৎসর পরে কদ্রুর প্রত্যেক ডিম্ব থেকে পুত্র নির্গত হ’ল। নিজের