পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৭৮
মহাভারত

মানুষ যেমন জীর্ণ বস্ত্র ত্যাগ ক’রে অন্য নূতন বস্ত্র গ্রহণ করে, সেইরূপ দেহী (আত্মা) জীর্ণ শরীর ত্যাগ করে অন্য নব শরীর পান।—

জাতস্য চ ধ্রুবো মৃত্যুর্ধ্রুবং জন্ম মৃতস্য চ।
তস্মাদপরিহার্যেঽর্থে ন ত্বং শোচিতুমর্হসি॥
অব্যক্তাদীনি ভূতানি ব্যক্তমধ্যানি ভারত।
অব্যক্তনিধনান্যৈব তত্র কা পরিদেবনা॥
স্বধর্মমপি চাবেক্ষ্য ন বিকম্পিতুমর্হসি।
ধর্ম্যাদ্ধি যুদ্ধাচ্ছ্রেরোনাৎ ক্ষত্রিয়স্য ন বিদ্যতে॥
যদৃচ্ছয়া চোপপন্নং স্বর্গদ্বারমপাবৃতম।
সুখিনঃ ক্ষত্রিয়াঃ পার্থ লভন্তে যুদ্ধমীদৃশম্॥
অথ চেৎ ত্বমিমং ধর্ম্যং সংগ্রামং ন করিষ্যসি।
ততঃ স্বধর্মং কীর্তিঞ্চ হিত্বা পাপমবাপ্‌স্যসি॥
হতো বা প্রাপ্‌স্যসি স্বর্গং জিত্বা বা ভোক্ষ্যসে মহীম্।
তস্মাদুত্তিষ্ঠ কৌন্তেয় যুদ্ধায় কৃতনিশ্চয়ঃ॥
সুখদুঃখে সমে কৃত্বা লাভালাভৌ জয়াজয়ৌ।
ততো যুদ্ধায় যুজ্যস্ব নৈবং পাপমবাপ্‌স্যসি॥

―যে জন্মেছে তার মৃত্যু নিশ্চয় হবে এবং মৃতব্যক্তি নিশ্চয় পুনর্বার জন্মাবে; অতএব এই অপরিহার্য বিষয়ে তুমি শোক করতে পার না। হে ভারত, জীবসকল আদিতে (জন্মের পর্বে) অব্যক্ত, মধ্যে (জীবিতকালে) ব্যক্ত, নিধনে (মরণের পর) অব্যক্ত; তবে কিসের খেদ? আর, তোমার স্বধর্ম বিচার ক’রেও তুমি বিকম্পিত হ’তে পার না, কারণ ধর্মযুদ্ধের চেয়ে ক্ষত্রিয়ের পক্ষে শ্রেয়স্কর কিছু নেই। উন্মুক্ত স্বর্গদ্বার আপনা থেকেই উপস্থিত হয়েছে, সুখী ক্ষত্রিয়রাই এমন যুদ্ধ লাভ করেন। যদি তুমি এই ধর্মযুদ্ধ না কর তবে স্বধর্ম ও কীর্তি হারিয়ে পাপগ্রস্ত হবে। যদি হত হও তবে স্বর্গ পাবে, যদি জয়ী হও তবে পৃথিবীর রাজ্য ভোগ করবে। অতএব হে কৌন্তেয়, যুদ্ধে কৃতনিশ্চয় হয়ে গাত্রোত্থান কর। সুখদুঃখ লাভ-অলাভ জয়-পরাজয় সমান জ্ঞান ক’রে যুদ্ধে নিযুক্ত হও, এরূপ করলে তুমি পাপগ্রস্ত হবে না।

 তার পর কৃষ্ণ বললেন, এখন আমি কর্মযোগ অনুসারে ধর্মতত্ত্ব বলছি শোন, এই ধর্মের স্বল্পও মহাভয় হ’তে ত্রাণ করে। বেদসকল ত্রিগুণাত্মক পার্থিব বিষয়ের বর্ণনায় পূর্ণ, তুমি ত্রিগুণ অতিক্রম ক’রে রাগদ্বেষাদির অতীত, সঞ্চয় ও রক্ষণে নিস্পৃহ এবং আত্মনির্ভরশীল হও।—