পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
মহাভারত

দুই ডিম্ব থেকে কিছুই বার হ’ল না দেখে বিনতা একটি ডিম্ব ভেঙে দেখলেন, তার মধ্যস্থ সন্তানের দেহের ঊর্ধ্বভাগ আছে কিন্তু নিম্নভাগ অপরিণত। সেই পুত্র ক্রুদ্ধ হয়ে মাতাকে শাপ দিলেন, তোমার লোভের ফলে আমার দেহ অসম্পূর্ণ হয়েছে, তুমি পাঁচ শ বৎসর কদ্রুর দাসী হয়ে থাকবে। অন্য ডিম্বটিকে অসময়ে ভেঙো না, যথাকালে তা থেকে পুত্র নির্গত হয়ে তোমার দাসীত্ব মোচন করবে। এই কথা ব’লে তিনি আকাশে উঠলেন এবং অরুণরূপে সূর্যের সারথি হলেন। গরুড়ও যথাকালে জন্মগ্রহণ করলেন এবং জননী বিনতাকে ত্যাগ ক’রে ক্ষুধার্ত হয়ে আকাশে উড়লেন।

 একদিন কদ্রু ও বিনতা দেখলেন, তাঁদের নিকট দিয়ে উচ্চৈঃশ্রবা অশ্ব যাচ্ছে।[১] অমৃতমন্থনে উৎপন্ন এই অশ্বরত্নের প্রশংসা সকল দেবতাই করতেন।

 শৌনক অমৃতমন্থনের বিবরণ শুনতে চাইলে সৌতি বললেন।—একদা দেবগণ সুমেরু পর্বতের শিখরে বসে অমৃতপ্রাপ্তির জন্য মন্ত্রণা করছিলেন। নারায়ণ ব্রহ্মাকে বললেন, দেবগণ ও অসুরগণ একত্র হয়ে সমুদ্রমন্থন করুন, তা হ’লে অমৃত পাবেন। ব্রহ্মা ও নারায়ণের আদেশে নাগরাজ অনন্ত মন্দর পর্বত উৎপাটন করলেন। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে দেবতারা সমুদ্রতীরে গিয়ে বললেন, অমৃতের জন্য আমরা আপনাকে মন্থন করব। সমুদ্র বললেন, আমাকে অনেক মর্দন সইতে হবে, অমৃতের অংশ যেন আমি পাই।

 দেবাসুরের অনুরোধে সাগরস্থ কূর্মরাজ মন্দর পর্বতকে পৃষ্ঠে ধারণ করলেন, ইন্দ্র বজ্র দ্বারা পর্বতের নিম্নদেশ সমান করে দিলেন। তারপর মন্দরকে মন্থনদণ্ড এবং নাগরাজ বাসুকি (অনন্ত)কে রজ্জু ক’রে দেবাসুর সমুদ্র মন্থন করতে লাগলেন। অসুরগণ নাগরাজের শীর্ষদেশ এবং দেবগণ পুচ্ছ ধারণ করলেন। বাসুকির মুখ থেকে ধূম ও অগ্নিশিখার সহিত যে নিঃশ্বাসবায়ু নির্গত হ’ল তা মেঘে পরিণত হয়ে পরিশ্রান্ত দেবাসুরের উপর জলবর্ষণ করতে লাগল। সমুদ্র থেকে মেঘগর্জনের ন্যায় শব্দ উঠল, মন্দরের ঘর্ষণে বহু জলজন্তু নিষ্পিষ্ট হ’ল, পর্বতের বৃক্ষসকল পক্ষিসমেত নিপতিত হ’ল, বৃক্ষের ঘর্ষণে অগ্নি উৎপন্ন হয়ে হস্তী সিংহ প্রভৃতি জন্তুকে দগ্ধ ক’রে ফেললে। নানাপ্রকার বৃক্ষের নির্যাস, ওষধির রস এবং কাঞ্চনদ্রব সমুদ্রজলে পড়ল। সেই সকল রসমিশ্রিত জল থেকে দুগ্ধ ও ঘৃত উৎপন্ন হ’ল।

 তারপর মথ্যমান সাগর থেকে চন্দ্র উঠলেন এবং ঘৃত থেকে লক্ষ্মী, সুরা


  1. পরবর্তী ঘটনা ৭-পরিচ্ছদে আছে।