অচেতনপ্রায় হয়ে মরণের প্রতীক্ষা করি তবেই আমাকে বধ করা যেতে পারে। যদি কোনও বিশ্বস্ত পুরুষ আমাকে অত্যন্ত অপ্রিয় সংবাদ দেয় তবে আমি যুদ্ধকালে অস্ত্র ত্যাগ করি— তোমাকে এই কথা সত্য বলছি।
তার পর যুধিষ্ঠির কৃপাচার্যের কাছে গেলেন। তিনিও ভীষ্ম-দ্রোণের ন্যায় নিজের পরাধীনতা জানিয়ে বললেন, মহারাজ, আমি অবধ্য, তথাপি তুমি যদ্ধ কর, জয়ী হও। তোমার আগমনে আমি প্রীত হয়েছি; সত্য বলছি, আমি প্রত্যহ নিদ্রা থেকে উঠে তোমার জয়কামনা করব।
তার পর যুধিষ্ঠির শল্যের কাছে গিয়ে তাঁকে অভিবাদন ও প্রদক্ষিণ করলেন। শল্যও বললেন, তোমার সম্মান প্রদর্শনে আমি প্রীত হয়েছি, তুমি না এলে আমি শাপ দিতাম। আমি কৌরবগণের বশীভূত, তোমার কি সাহায্য করব বল। যুধিষ্ঠির বললেন, আপনি পূর্বে[১] বর দিয়েছিলেন যে যুদ্ধকালে সূতপত্রের তেজ নষ্ট করবেন, সেই বরই আমার কাম্য। শল্য বললেন, কুন্তীপুত্র, তোমার কামনা পূর্ণ হবে, তুমি যাও, যুদ্ধ কর, তুমি নিশ্চয় জয়ী হবে।
কৌরবগণের মহাসৈন্য থেকে নির্গত হয়ে যুধিষ্ঠির তাঁর ভ্রাতাদের সঙ্গে ফিরে গেলেন। তখন কৃষ্ণ কর্ণের কাছে গিয়ে বললেন, শুনেছি তুমি ভীষ্মের প্রতি বিদ্বেষের জন্য এখন যুদ্ধ করবে না; যত দিন ভীষ্ম না মরেন তত দিন তুমি আমাদের পক্ষে থাক। ভীষ্মের মৃত্যুর পর যদি দুর্যোধনকে সাহায্য করা উচিত মনে কর তবে পুনর্বার কৌরবপক্ষে যেয়ো। কর্ণ বললেন, কেশব, আমি দুর্যোধনের অপ্রিয় কার্য করব না; জেনে রাখ, আমি তাঁর হিতৈষী, তাঁর জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত হয়েছি।
কৃষ্ণ পাণ্ডবদের কাছে ফিরে গেলেন। অনন্তর যুধিষ্ঠির কুরসৈন্যের উদ্দেশে উচ্চকণ্ঠে বললেন, যিনি আমাদের সাহায্য করতে চান তাঁকে আমি বরণ করে নেব। এই কথা শুনে যুযুৎসু বললেন, যদি আমাকে নেন তবে আমি ধার্তরাষ্ট্রদের সঙ্গে যুদ্ধে করব। যুধিষ্ঠির বললেন, যুযুৎসু, এস এস, আমরা সকলে মিলে তোমার নির্বোধ ভ্রাতাদের সঙ্গে যুদ্ধ করব, বাসুদেব ও আমরা একযোগে তোমাকে বরণ করছি। দেখছি তুমিই ধৃতরাষ্ট্রের পিণ্ড ও বংশ রক্ষা করবে।
ভ্রাতাদের ত্যাগ ক’রে যুযুৎসু দুন্দুভি বাজিয়ে পাণ্ডবসৈন্যমধ্যে প্রবেশ করলেন। যুধিষ্ঠিরাদি পুনর্বার বর্ম ধারণ ক’রে রথে উঠলেন, রণবাদ্য বেজে উঠল,
- ↑ উদ্যোগপর্ব ৩-পরিচ্ছেদ দ্রষ্টব্য।