পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
১৫

দেবী, শ্বেতবর্ণ—উচ্চৈঃশ্রবা অশ্ব ও নারায়ণের বক্ষের ভূষণ কৌস্তুভ মণির উদ্ভব হ’ল। সর্বকামনাপূরক পারিজাত এবং সুরভি ধেনুও উত্থিত হ’ল। লক্ষ্মী, সুরা দেবী, চন্দ্র ও উচ্চৈঃশ্রবা দেবগণের নিকট গেলেন। অনন্তর ধন্বন্তরি দেব অমৃতপূর্ণ কমণ্ডলু নিয়ে উঠলেন, তা দেখে দানবগণ ‘আমার আমার’ ব’লে কোলাহল করতে লাগল। তারপর শ্বেতবর্ণ চতুর্দন্ত মহাকায় ঐরাবত উত্থিত হ’লে ইন্দ্র তাকে ধরলেন। অতিশয় মন্থনের ফলে কালকূট উঠল, সধূম অগ্নির ন্যায় সেই বিষে জগৎ ব্যাপ্ত হ’ল। ব্রহ্মার অনুরোধে ভগবান মহেশ্বর সেই বিষ কণ্ঠে গ্রহণ করলেন, সেই থেকে তাঁর নাম নীলকণ্ঠ।

 দানবগণ অমৃত ও লক্ষ্মী লাভের জন্য দেবতাদের সঙ্গে কলহ করতে লাগল। নারায়ণ মোহিনী মায়ায় স্ত্রীরূপ ধারণ ক’রে দানবগণের কাছে গেলেন, তারা মোহিত হয়ে তাঁকে অমৃত সমর্পণ করলে। তিনি দানবগণকে শ্রেণীবদ্ধ ক’রে বসিয়ে কমণ্ডলু থেকে কেবল দেবগণকে অমৃত পান করালেন। দানবগণ ক্রুদ্ধ হয়ে দেবগণের প্রতি ধাবিত হ’ল, তখন বিষ্ণু অমৃত হরণ করলেন। দেবতারা বিষ্ণুর কাছ থেকে অমৃত নিয়ে পান করছিলেন সেই অবসরে রাহু নামক এক দানব দেবতার রূপ ধারণ ক’রে অমৃত পান করলে। অমৃত রাহুর কণ্ঠদেশে যাবার আগেই চন্দ্র ও সূর্য বিষ্ণুকে বলে দিলেন, বিষ্ণু তখনই তাঁর চক্র দিয়ে সেই দানবের মুণ্ডচ্ছেদ করলেন। রাহুর মুণ্ড আকাশে উঠে গর্জন করতে লাগল, তার কবন্ধ (ধড়) ভূমিতে পড়ল, সমস্ত পৃথিবী কম্পিত হ’ল। সেই অবধি চন্দ্রসূর্যের সঙ্গে রাহুর চিরস্থায়ী শত্রুতা হ’ল।

 বিষ্ণু স্ত্রীরূপ ত্যাগ ক’রে দেবগণের সঙ্গে যোগ দিয়ে ঘোর যুদ্ধ করলেন। দানবগণ পরাজিত হয়ে পালিয়ে গেল।

৭। কদ্রু-বিনতার পণ—গরুড়—গজকচ্ছপ—অমৃতহরণ

 একদিন উচ্চৈঃশ্রবাকে দেখে কদ্রু ও বিনতা তর্ক করলেন, এই অশ্বের বর্ণ কি। বিনতা বললেন, শ্বেত; কদ্রু বললেন, এর পুচ্ছলোম কৃষ্ণ। অবশেষে এই পণ স্থির হ’ল যে কাল তাঁরা অশ্বটিকে ভাল ক’রে দেখবেন এবং যাঁর কথা মিথ্যা হবে তিনি সপত্নীর দাসী হবেন।

 কদ্রু তাঁর সর্প পুত্রদের ডেকে বললেন, তোমরা শীঘ্র গিয়ে ওই অশ্বের পুচ্ছে লগ্ন হও, যাতে তা কজ্জলবর্ণ দেখায়। যে সর্পরা সম্মত হ’ল না কদ্রু তাদের শাপ দিলেন, তোমরা জনমেজয়ের সর্পযজ্ঞে দগ্ধ হবে। পরদিন প্রভাতে কদ্রু ও